যুদ্ধ বন্ধ হলে বাংলাদেশেও সারের দাম কমবে: কৃষিমন্ত্রী

‘বিশ্ব বাজারে বর্তমানে এক কেজি সারের দাম ৮১ টাকা।’

বরিশাল প্রতিনিধি
Published : 3 August 2022, 12:06 PM
Updated : 3 August 2022, 12:06 PM

ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোর কারণে খাদ্যশস্য উৎপাদনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, “রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ হলে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কমলে বাংলাদেশেও সারের দাম কমবে। সারের দাম বাড়ানোয় খাদ্য উৎপাদনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

কেজিপ্রতি ইউরিয়া সারের দাম ছয় টাকা বাড়ানোর সরকারি ঘোষণার দুদিনের মাথায় বুধবার বরিশালে এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ভর্তুকি বাবদ সরকারের খরচ চারগুণ বেড়ে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা হয়েছে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। পাশাপাশি কৃষকের কথা বিবেচনায় নিয়ে এ পরিস্থিতিতেও দাম বাড়ানো হবে না বলে আশ্বস্ত করছিলেন।

মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, আমদানি চাহিদা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে সরকারি কোষাগারে চাপ সৃষ্টি হওয়ায় গত তিন মাস ধরে ব্যয় সঙ্কোচনের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আসছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ইউরিয়া সারের দামও বাড়ানো হল।

এই হারে দাম বাড়ানের ফলে প্রতিবছর ২৬ লাখ টন ইউরিয়া সারের ব্যবহার বিবেচনায় ভর্তুকি থেকে ১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা বাঁচাতে পারবে সরকার।

বিশ্ব বাজারে বর্তমানে এক কেজি সারের দাম ৮১ টাকা জানিয়ে বুধবার মন্ত্রী বলেন, “সেই সার ভর্তুকি দিয়ে দেশে ১৬ টাকায় বিক্রি হতো। যুদ্ধ বন্ধ হলে সারের দাম কমলে, এখানেও কমবে।

“কৃষকরা ইউরিয়া সার বেশি ব্যবহার করে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য আনার জন্য সারের দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।”

বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘বিদ্যমান শস্যবিন্যাসে তৈল ফসলের অন্তভুর্ক্তি এবং ধান ফসলের অধিক ফলনশীল জাতসমূহের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক এই কর্মশালায় মন্ত্রী ভোজ্যতেলের আমদানি কমিয়ে আনার ওপর জোর দেন।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “গত একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগে মানুষ সরিষার তেল খেতো, বিদেশ থেকে পাম তেল, সয়াবিন তেল কিছুই আনতে হতো না। কিন্তু এখন কেন লাগছে?

“আমাদের এক কৃষক ভাই বলেছেন, পাম-সয়াবিন তেল খেয়ে গ্যাসের ওষুধ খেতে হয়। তিনি সূর্যমুখী খেয়ে সেই কষ্ট থেকে বেঁচেছেন এবং অতিরিক্ত খরচও কমিয়েছেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, “প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার শুধু ভোজ্যতেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সবাই তেল খায় কিন্তু দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ জানেন না কত টাকার তেল বিদেশ থেকে আনতে হয়।”

তিনি বলেন, “এখানকার কৃষকদের আত্মবিশ্বাস দেখে আমি মুগ্ধ। তারা নতুন ফসল দিয়ে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উম্মোচন করতে চাচ্ছে। আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি, আগামী তিন বছরের মধ্যে ৪০ ভাগ বিদেশি আমদানি কমিয়ে নিয়ে আসবো। আমরা যদি ৪০ শতাংশ তেলের আমদানি সারা দেশে কমাতে পারি, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার আজ যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেটি অনেকাংশে কমে যাবে।”

বরিশালের ‘শস্যভাণ্ডার’ খ্যাতি পুনরুদ্ধারের আশ্বাস দিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “কেন আমরা এখানে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারছি না এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কী ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া দরকার, কী ধরনের অর্থ বরাদ্দ দরকার সেগুলো আমরা দেখছি।”

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে একটু কষ্ট করতে হবে। তবে হাহাকার, চরম সংকট, দুর্ভিক্ষ হবে না।”

বিএনপির সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনীতিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই সংকটে ঘোলা পানিতে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে বিএনপি। তাদের লক্ষ্য রাজনৈতিক লাভ নেওয়া। বাংলাদেশের মানুষ খুব সচেতন। বিএনপি আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে।”

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজিত এ কর্মশালায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিনুল উল আহসান, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার উপস্থিত ছিলেন।