“খুবই কষ্ট; রোদে চোখ-মুখ জ্বলছে। ভ্যান চালাতে পারছি না। যাত্রীও পাচ্ছি না।”
Published : 19 Apr 2024, 09:35 PM
“গরমে পান বরজে গিয়ে কাজ করতে পারছি না। রোদে পানের পাতাও শুকিয়ে যাচ্ছে।এবার যা গরম, সহ্য করা কঠিন।”
তপ্ত রোদে ভ্রু কুঁচকে কথাগুলো বলছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের পানচাষি ফিরোজ জোয়াদ্দার।
চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে; যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকছে তীব্র রোদ ও গরম। দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষরা কাজের আশায় বাইরে বের হলেও তীব্র গরমে কাজ করতে পারছেন না।
সকাল ১০টা বাজলেই রোদের তাপের কারণে বাইরে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে; বেলা ১২টার পর থেকে শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। যাদের জরুরি প্রয়োজন নেই, তারা ঘরের বাইরে বেরই হচ্ছেন না।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, “শুক্রবার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গত মঙ্গলবার থেকে প্রতিদিনই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থেকেছে ৪০ ডিগ্রির ওপরে।”
তিনি জানান, ৪০ দশমিক ০ ডিগ্রি থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রির তাপমাত্রার অবস্থানকে বলা হয়ে থাকে তীব্র তাপপ্রবাহ। আবহাওয়ার এ হিসেব অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা চারদিন চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।
প্রচণ্ড গরমে কৃষকরা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে না জানিয়ে পানচাষি ফিরোজ জোয়াদ্দার বলেন, “আমাদের তো সবদিক থেকে ক্ষতি। নিজে বাঁচব নাকি ফসল বাঁচাব?”
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুলচারা মাঠে নিজের কচুক্ষেতে কাজ করছিলেন কুলচারা গ্রামের কৃষক মুনতাজ আলী। বলেন, “রোদ গরম দেখতে গেলে হবে না। ফসল বাঁচাতে হলে মাঠে আসতেই হবে। রোদ গরমের কষ্ট সহ্য করে মাঠে আসছি। সেচ দিয়ে দিয়ে কচুক্ষেত টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। তারপরও রোদে ক্ষেতের পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে।
“নিজেরাও রোদ-গরমে কষ্ট পাচ্ছি। সেচ ও ওষুধ দিতে গিয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা আর কিছুদিন থাকলে লোকসান হয়ে যাবে।”
চুয়াডাঙ্গা শহরের ইসলামপাড়ার জিহাদ হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, শহরের বড় বজারে তার বাবার ব্যবসা আছে। তাকে সেখানে প্রয়োজনে যেতে হয়। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার পথ।
“সেটা পাড়ি দেওয়াও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। রোদের মধ্যে বাড়ি থেকে বাজারে যাতায়াত করা যাচ্ছে না।” যোগ করেন জিহাদ।
চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় বাজার এলাকায় ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের আজিজ হোসেন। তিনি বলছিলেন, “খুবই কষ্ট; রোদে চোখ-মুখ জ্বলছে। ভ্যান চালাতে পারছি না। যাত্রীও পাচ্ছি না।
“এই রোদের মধ্যে কেউ আর খোলা ভ্যানে চড়ছেন না। কেন চড়বেন, রোদে কি খোলা ভ্যানে যাওয়া যায়? আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে।”
একই গ্রামের শেখ লিটন এক সংবাদকর্মী বলেন, “সংবাদ সংগ্রহ, ছবি আর ভিডিও করার প্রয়োজনে বাইরে আসতেই হচ্ছে। কাজ করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। বেশিক্ষণ বাইরে থাকা যাচ্ছে না। গলা শুকিয়ে আসছে। মোটরসাইকেলে যাচ্ছি, মনে হচ্ছে চোখ-মুখ পুড়ে যাচ্ছে।”
গরমে জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠলেও আপাতত কোনো সুখবর নেই বলে জানালেন চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান।
তিনি বলেন, “আপাতত কোনো সুখবর নেই। এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে। তাপমাত্রা আরও বেড়ে যেতেও পারে।”