শেরপুরে প্রথম গ্রীষ্মকালীন ফুলকপিতে হাসলেন কৃষক কামরুল

সত্তর শতাংশ জমিতে কামরুলের খরচ হয়েছে ৫৩ হাজার টাকা; বিক্রি ২ লাখ টাকা।  

মো. আব্দুর রহিম বাদলবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2023, 03:14 AM
Updated : 19 April 2023, 03:14 AM

শেরপুর সদর উপজেলায় প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন ফুলকপির আবাদ করে ভালো লাভের মুখ দেখেছেন স্থানীয় এক কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় লছমনপুর ইউনিয়নের দিগলদি মোল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক কামরুল হাসান তার ৭০ শতাংশ জমিতে এই ফুলকপি চাষ করেন।

তার এই সাফল্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অন্য কৃষকরাও এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামীতে চাষ করার স্বপ্ন দেখছেন।

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহী কৃষক কামরুল হাসান খুবই আগ্রহ নিয়ে এবার পরীক্ষামূলকভাবে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি আবাদ করেন। ফলনও হয়েছে খুবই ভালো। এতে খুব কম কীটনাশক ব্যবহার করেছেন। পোকামাকড় থেকে ফুলকপি রক্ষায় ‘হলুদ ফাঁদ’ ও ‘সেক্স ফেরোমন’ ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছে।

পোকা দমনে হলুদ ফাঁদ একটি নিরাপদ, অবিষাক্ত ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। হলুদ ফাঁদ বিভিন্ন পোকা বিশেষ করে জাব পোকা, সাদা মাছি ও শোষক পোকাসহ অন্যান্য ছোট পোকা দমনে ব্যবহার করা হয়। ফসলের ক্ষেতে যখন আঠা মিশ্রিত হলুদ শিট বা হলুদ রংয়ের আঠালো ফাঁদ টাঙিয়ে দেওয়া হয় তখন পোকা সেখানে উড়ে এসে পড়ে এবং আঠায় আটকে যায়।

ফেরোমন ফাঁদ হচ্ছে এক ধরনের কীটপতঙ্গের দমন ফাঁদ, যাতে ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করা হয়। পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করার জন্য স্ত্রী পোকা থেকে এক ধরনের রাসায়নিক নির্গত হয় যা সেক্স ফেরোমন নামে পরিচিত। চমকপ্রদ কার্যকারিতার জন্য কৃষকদের মধ্যে এটি জাদুর ফাঁদ নামেও পরিচিত।

নিজের উৎপাদিত ফুলকপির ভালো বাজারমূল্য পেয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত কৃষক কামরুল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষ করছি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি অফিসারের পরামর্শে। নতুন কিছু উৎপাদন করলে যাতে ভালো বাজার পাই সেজন্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি আবাদে পরামর্শ দেয় আমাকে। তারাই আমাকে ওই ফুলকপির বীজ সংগ্রহ করে দেন।” 

কামরুলের ৭০ শতাংশ জমিতে আবাদ করতে ১০ হাজার টাকার বীজ, ৫ হাজার টাকার সার, ২০ হাজার টাকার শ্রমিক মজুরি মিলে মোট ৫৩ হাজার ৪৪৯ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান। 

এ পর্যন্ত (১৮ এপ্রিল) ১ লাখ ৭৮ হাজার ২১৫ টাকার কপি বিক্রি হয়েছে; আরও প্রায় ৩০/৩৫ হাজার টাকা বিক্রি হতে পারে এবং সর্বসাকুল্যে ২ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। 

বীজ সংগ্রহ থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়ে কৃষি অফিসারদের সঠিক সময়ে পরামর্শ প্রদান করায় ফুলকপি চাষ করে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ করেন এবং এজন্য কামরুল তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।  

গ্রীষ্মকালীন ফুলকপির জমিতে কাজ করে ভালো মজুরি পেয়েছেন স্থানীয় কৃষি শ্রমিক জিয়াউল হক।

জিয়াউল হক বলেন, “আমি এ ফুলকপির জমিতে কাজ করে মাসে ১৫ হাজার টাকা মজুরি পাই। এ ছাড়া দৈনিক ১০০ টাকা করে খাবার জন্য আমাকে দেয়। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমার দিন ভালোভাবেই কাটছে।” 

কৃষি শ্রমিক মনেজা বেগম ফুলকপির ক্ষেতে পরিচর্যা ও অন্যান্য কাজ করে দৈনিক ২৫০ টাকা মজুরি পান। বাড়ির কাছে এই একটি কাজ পেয়ে তিনি খুবই খুশি।  

কামরুল হাসান গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি আবাদ করে লাভবান হওয়ায় এলাকার অন্য কৃষকরাও এ চাষে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আগামীতে তারাও এ ফুলকপির আবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন। 

স্থানীয় কৃষক লাল চাঁন ও আনোয়ার বলেন, কামরুল হাসান গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষ করে লাভবান হয়েছে। তারা তা দেখেছেন। আগামীতে তারাও এ ফুলকপির আবাদ করবেন। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর বলেন, শেরপুর সদর উপজেলার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহী কৃষক কামরুল হাসান। তিনি এ বছর গ্রীষ্মকালীন ফুলকপির আবাদ করেছেন। বর্তমানে বাজারে ফুলকপি বিক্রি করছেন। কৃষি বিভাগ তাকে প্রযুক্তি দিয়ে সর্বাত্মক সাহায্য করছে। তাকে দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।  

“এ এলাকাকে আধুনিক প্রযুক্তির ভিলেজ হিসেবে রূপান্তর করব। আগামীতে বিষমুক্ত নিরাপদ শাক-সবজি উৎপাদনে কৃষি বিভাগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।”