কয়েক বছর ধরে নভেম্বর মাসে যৌথভাবে খ্রিস্টান ও গারো রীতিতে ‘ওয়ানগালা’ উৎসব বা নবান্ন উৎসব পালন করছেন গারোরা।
Published : 20 Nov 2022, 05:31 PM
ভালো ফলনের জন্য শস্য দেবতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেরপুর পালিত হয়েছে গারো সম্প্রদায়ের ‘ওয়ানগালা’ উৎসব।
গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন হয়। তাই দেবতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্য এই আয়োজন করেন তারা। পাশাপাশি করা হয় মনোবাসনার নানা নিবেদনও।
রোববার শেরপুরের ঝিনাইগাতীর মরিয়মনগরে সাধু জর্জের ধর্মপল্লীতে এই উৎসব পালন করেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির গারো সম্প্রদায়ের মানুষরা।
সকাল ৯টায় ‘থক্কা’ বা চালের গুড়ার তিলক প্রদান এবং নুতন ধানসহ অন্যান্য ফসলকে উৎসর্গ করে উৎসবের শুভ সূচনা করা হয়। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয় ফসল দেবতা ‘মিসি সালজং’কে।
এরপর স্থানীয় গীর্জাঘরে শুরু হয় খ্রিষ্ট জাগ। এসময় তারা তাদের ফসল দেবতা ও প্রভুর কাছে প্রার্থনার মধ্যদিয়ে ধর্মীয় রীতি পালন করেন। পরে মরিয়মনগর গীর্জার মাঠে গারো কৃষ্টি-কালচারের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সব শেষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কীর্ত্তনের মধ্য দিয়ে ‘ওয়ানগালা’ উৎসবের সার্বিক কাজ শেষ করা হয়। এসব অনুষ্ঠানের সকল কার্যাদি সম্পন্ন করেন ওই ধর্মপল্লীর মূল পুরোহিত ফাদার ডেভিড বিপুল দাস।
গারোরা খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর থেকে খ্রিস্টান রীতি পালন করে আসলেও কয়েক বছর ধরে নভেম্বর মাসে যৌথভাবে খ্রিস্টান ও গারো রীতিতে ‘ওয়ানগালা’ উৎসব বা নবান্ন উৎসব পালন করে আসছেন।
উৎসব অংশ নেওয়া গারো সম্প্রদায়ের হেমারশান সাংমা, কার্ডিরোজ চিরাণ, আলফেক্স চিরাণ ও অসিম ম্রং জানান, নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষা ও শস্য দেবতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্যই এই আয়োজন।পাশাপাশি পরিবারে ভালোবাসা, আনন্দ, সব পরিবারের মঙ্গল কামনা করে এই উৎসব করা হয়।
এছাড়া ‘ওয়ানগালা’ উপলক্ষে দূর-দূরান্তের অনেক আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসেন। তাদের সঙ্গে অনেকের দেখা-সাক্ষাতও হয় এই উৎসবকে ঘিরে। তবে এ উৎসবে প্রতি বছর নিজেদের কৃষ্টি-কালচারকে ধরে রাখা এবং সম্প্রীতি রক্ষাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
বিগত দুই বছর করোনার জন্য সীমিত আকারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও এবার একটু বড় পরিসরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে উৎসবকে ঘিরে মিশনের বাইরে ছোট্ট পরিসরে গারোদের নানা পোষাক ও শিশুদের খেলনার পসরা নিয়ে বসেন স্থানীয় দোকানীরা।