এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসেম খান।
Published : 03 Jan 2024, 10:42 PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৫ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে আর কোনোদিন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোটের মাঠে দেখা যায়নি অসুস্থতার কারণে। তার পরিবর্তে পরিবার ও দলের লোকজন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
এই সুযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের তিন নেতা। তাদের সঙ্গে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এক সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতাও আছেন।
বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া এলাকা নিয়ে গঠিত আসনে এই চিত্রই দেখতে পাচ্ছেন ভোটাররা।
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসেম খান। সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু মারা যাওয়ার পর তিনি উপ-নির্বাচনে জয়লাভ করেন। হাসেম কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
এ ছাড়া এখানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন (ফুলকপি), কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান এম এ জাহের (কেটলি), কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমি (ট্রাক), কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী (কাঁচি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে জাহাঙ্গীর এরই মধ্যে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
এ আসনের বাকি চার প্রার্থী হলেন- গণফোরামের আলীমুল ইহসান (উদীয়মান সূর্য), সুপ্রিম পার্টির খাজা বাকী বিল্লাহ (একতারা), জাতীয় পার্টির জাহাঙ্গীর আলম (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত শওকত মাহমুদ (ঈগল)।
কুমিল্লা-৫ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৯১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৬ হাজার ১২১ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১০ হাজার ৭৯৮।
তিন দশকের ভোটের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এখানে শুধু ২০০১ সালে বিএনপির মো. ইউনুছ জয়লাভ করেছেন। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের আব্দুল মতিন খসরু জয় পেয়েছেন।
ফলে বলা যেতে পারে, আসটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অসুস্থতার কারণে প্রায় এক মাস ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন আবুল হাসেম খান। বাবার পক্ষে মাঠে নেমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন হাসেম খানের কন্যা নাজিয়া হাসেম ওরফে তানজি।
হৃদরোগের সমস্যায় নৌকার এই প্রার্থী টানা ৩০ দিন ধরে ঢাকায় হাসপাতাল এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
ভোটারদের ভাষ্য, এ আসনে হাসেম, সাজ্জাদ, জাহের এবং শওকত মাহমুদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
হাসেম খানের মেয়েসহ তার পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আবদুছ ছালাম বেগ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম রেজা সৌরভ, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম ও জেলা পরিষদের সদস্য মশিউর খানসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর জাহাঙ্গীর খান চৌধুরীও নৌকার পক্ষে কাজ করছেন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আবদুছ ছালাম বেগ বলেন, “আবুল হাশেম খান অসুস্থতার কারণে মাঠে আসতে পারছেন না। তিনি ঢাকার বাসায় আছেন। তবে আমরা দিনরাত এক করে নৌকার জন্য প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।
“প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরে নৌকার জন্য ভোট চাইছি। এরই মধ্যে চারদিকে নৌকার গণজোয়ার দেখতে পাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা হাসেম খানের হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন। নেত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আমরা নৌকার পক্ষে। যারা আওয়ামী লীগ করে, তারা নৌকার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো কাঁচি প্রতীকের জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী বলেন, “সারাটি জীবন দলের জন্য কাজ করেছি। তাই শেষ জীবনে নৌকার সঙ্গে বেইমানি করতে পারি না। তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আমি নৌকা মার্কার পক্ষে আছি। নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।”
সংসদ সদস্য আবুল হাসেম খানের মেয়ে নাজিয়া হাসেম তানজি সাংবাদিকদের বলেন, “সেপ্টেম্বরে হৃদরোগের কারণে বাবার বাইপাস সার্জারি হয়। এরপর থেকে তিনি বিশ্রামে আছেন। এরই মধ্যে নৌকার মনোনয়ন পান তিনি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর একদিন এলাকার একটি কর্মসূচিতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
“এরপর থেকে তিনি হাসপাতাল ও বাসায় ঘুরেফিরে আছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার শরীর ভালো নেই। এই শরীর নিয়ে গণসংযোগ ও প্রচার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বাবার হয়ে আমিসহ দলের নেতাকর্মীরা প্রচারে রয়েছি। চারদিকে গণজোয়ার দেখতে পাচ্ছি নৌকার।”
বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, “যেখানেই যাচ্ছি মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ঈগল প্রতীক বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।”
ফুলকপি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন স্বপন বলেন, “মানুষ এখন নৌকার মাঝির পরিবর্তন চায়। চারদিকে ফুলকপির গণজোয়ার উঠেছে। ইন্নশাআল্লাহ, আমার বিজয় সুনিশ্চিত। তবে চারদিকে কালো টাকার ছড়াছড়ি চলছে। এ বিষয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের খেয়াল রাখতে হবে।
কেটলি প্রতীকের প্রার্থী এম এ জাহের বলেন, “যেখানেই প্রচারে যাচ্ছি- সেখানেই মানুষের ঢল নামছে। মানুষের মধ্যে কেটলি প্রতীকের গণজোয়ার দেখতে পাচ্ছি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার বিজয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।”