“যাদেরকে নির্বাচিত করল, তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের দুর্নীতি দেখে গাজীপুরবাসী লজ্জিত হয়েছে। এর হাত থেকে তারা নিস্তার চায়।”
Published : 15 Apr 2023, 09:38 PM
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর আজমত উল্লাহ খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘এলাকাবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করেছেন’।
২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েও বিএনপি নেতা এম এ মান্নানের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়া প্রবীণ এই নেতা বলেছেন, গত এক দশকে গাজীপুরে ‘পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি’। তিনি মানুষের সব আক্ষেপ পূরণ করবেন।
আজমত বলেন, “আমার দীর্ঘদিনের একটা প্রত্যাশা ছিল দলের কাছে। যেহেতু দলের প্রতীক নিয়ে দলগতভাবে সিটি ইলেকশন হচ্ছে, তাই মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়াটা আমার যেমন প্রত্যাশা ছিল, গাজীপুরের আওয়ামী পরিবারেরও তেমনি একটা প্রত্যাশা ছিল। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আমার ও আমার এলাকাবাসীর সে প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। আমি আমার এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই।”
শনিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করে।
রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র এ বি এম খায়রুজ্জামান লিটন ও আবদুল খালেক তালুকদারের ওপর ভরসা রেখেছে ক্ষমতাসীন দল।
প্রার্থী বদল হয়েছে বরিশাল ও গাজীপুরে।
গত নির্বাচনে দক্ষিণের বরিশাল মহানগরে বিজয়ী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর জায়গায় তার চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে দলীয় প্রতীক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঢাকা লাগোয়া গাজীপুরে গতবার বিজয়ী জাহাঙ্গীর আলম তার পদ হারিয়েছেন আগেই। বঙ্গবন্ধু ও শহীদের সংখ্যা নিয়ে ঘরোয়া আলোচনায় ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের অভিযোগ উঠার পর গত বছরের ডিসেম্বরে সাময়িক বরখাস্ত ও দলীয় পদ হারান। সম্প্রতি তাকে দলের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার জায়গায় আজমত উল্লাহ খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
২০১৩ সালে আজমতের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রত্যাশী ছিলেন জাহাঙ্গীরও। দলের নির্দেশেও ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি না হওয়ার পর নিখোঁজ হন জাহাঙ্গীর। ভোটের আগে আগে গাজীপুরে ফিরে কাঁদতে কাঁদতে আজমতকে সমর্থন জানান। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যালটে তার নাম থেকে যায়।
গাজীপুরে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও সেই নির্বাচনে আজমত হারেন এক লাখ ৬ হাজার ৫৭৭ ভোটে।
সেই নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের সমর্থক নেতা-কর্মীদের আজমত উল্লাহর পক্ষে নামতে দেখা যায়নি। এটা তখন নৌকার পরাজয়ে ‘ভূমিকা’ রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আজমত বলেন, “গত ১০ বছরে এখানে যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন, তাদের দুর্নীতির যে ফিরিস্তি রয়েছে যা ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছে, এ সমস্ত বিষয়গুলো মানুষ দেখেছে। যাদেরকে নির্বাচিত করল, তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের দুর্নীতি দেখে গাজীপুরবাসী লজ্জিত হয়েছে। এর হাত থেকে তারা নিস্তার চায়।”
গাজীপুরবাসী একটি পরিকল্পিত নগর চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত সময়ে গাজীপুর সিটিতে পরিকল্পিতভাবে কোনো উন্নয়ন হয়নি। যদিও প্রধানমন্ত্রী এ সিটির উন্নয়নের জন্য সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে অনেক টাকাই তারা উন্নয়নের জন্য খরচ করতে পারেননি।
“গাজীপুর সিটি আবর্জনার শহরে পরিণত হয়েছে। এগুলো জনগণ জানে। এখানে ডাম্পিং প্লেস করার জন্য, জমি অধিগ্রহণ করার জন্য, ট্রাক ও বাস টামিনালের জায়গা নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ৭৮২ কোটি টাকা দিয়েছেন। এই যে টাকাগুলো ব্যবহার করা হয়নি। এ কারণে মানুষের একটা প্রত্যাশা ছিল এটা কীভাবে করা যায়।”
“তাদের (গাজীপুরবাসী) একটা বিশ্বাস ছিল, যদি আমাকে মানোনয়ন দেওয়া হয় এবং আমি যদি নির্বাচিত হই, তাহলের আমরা সহজেই তা ওভারকাম করতে পারব”, বলেন আজমত উল্লাহ।
টঙ্গী পৌরসভায় চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে টানা ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করা প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “আমার ওই অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা (গাজীপুরবাসী) যে পরিচ্ছন্ন শহর আশা করেছে, যে প্রশাসন আশা করছে, সেই রকমের সিটি প্রশাসন আমি উপহার দিতে চাই। পরিকল্পিত নগর গড়তে চাই। এজন্য আমি সকলের সমর্থন, দোয়া ও সহযোগিতা চাই এবং মূল্যবান ভোট কামনা করছি।”
“সর্বোপরি আমাকে মনোনয়নের মাধ্যমে আমার দলীয় নেতা-কর্মী ও জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল সেই প্রত্যাশাটা পূরণ হয়েছে”, এই বলে শেষ করেন আজমত উল্লাহ খান।