রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের একদল সাবেক শিক্ষার্থী ২০১৪ সালে ফুলছড়ির হোসেনপুর গ্রামে গড়ে তোলেন ‘অরকা হোমস’।
Published : 24 Apr 2023, 09:35 PM
সাভারের রানা প্লাজা ধসে প্রাণ বা অঙ্গ হারানো পরিবারের সদস্যদের নয় বছর ধরে সেবা দিয়ে আসছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার একটি বেসরকারি সংগঠন।
উপজেলার হোসেনপুরে ‘অরকা হোমস’ নামে প্রতিষ্ঠানটি রানা প্লাজায় হতাহত পরিবারগুলোর ৩০টি শিশুকে বড় করছে যত্ন দিয়ে।
এদের মধ্যে ১৪টি ছেলে এবং ১৬টি মেয়ে রয়েছে। তাদের লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদনসহ সব সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে।
রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্যরা ২০১৪ সালে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে গড়ে তোলেন এই ‘অরকা হোমস’।
১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেখানে তিনতলার দুটি এবং প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। সেখানেই থাকছে শিশুরা। সেখানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠগ্রহণ ও বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। আছে একটি পাঠাগারও।
এই ৩০ জনের বাইরে আরও ২৭ জন অনাথ শিশু সেখানে বাস করে।
অরকা হোমসের মাঠেই রয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘হোসেনপুর মুসলিম একাডেমি’। সেখানেই এই শিশুরা লেখাপড়া করে আসছে। স্কুলটিতে প্লে গ্রুপ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে।
এর শিক্ষার্থী প্রায় ৪০০ জন, শিক্ষক সংখ্যা ২০।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় পাশের ‘সূর্য্যমুখী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’ থেকে।
রানা প্লাজায় আহত গীতারাণী রায়ের ছেলে শংকর কুমার রায় পড়ছে এখানে। জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা গ্রামের স্বপন চন্দ্র রায় তার বাবা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শংকর বলে, “আমার মা রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে মা। সরকারিভাবে ৩ লাখ টাকা সাহায্য পেয়েছিল, যা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলছে। আমি এখন অরকা হোমে থেকে লেখাপড়া করছি।”
উচ্চশিক্ষা অর্জন করে প্রকৌশলী হতে চায় শংকর।
আল-আমিন মিয়ার মা নার্গিস বেগম প্রাণ হারিয়েছেন রানা প্লাজায়।
আল-আমিন বলে, “মা মারা যাওয়ার পর এখানেই আমার ঠাঁই হয়েছে। আমি লেখাপড়া করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।”
হোসনেপুর মুসলিম একাডেমি ও অরকা হোমসের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত রফিক মিয়া জানান, রানা প্লাজায় হতাহত পরিবারের সেসব সন্তান এখানে রয়েছে তাদের লেখাপড়া, থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ অরকা হোমস থেকে বহন করা হচ্ছে। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ থেকেও কিছু আর্থিক সহায়তা আসে।
গাইবান্ধা ছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকেও এখানে এসেছে শিশুরা। এদের কারও বাবা, কারও মা মারা গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ সব পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হবে।”
মেয়েদের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত নুরজাহান বেগম বলেন, “এখানে বসবাসকারী মেয়ে শিশুদের লেখাপড়া শেষে কর্মসংস্থান ও বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে।”
তিনি জানান, দুজন চিকিৎসক সপ্তাহে দুই দিন এখানে এসে শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যান।
হোসনেপুর মুসলিম একাডেমি ও অরকা হোমসের প্রধান উদ্যোক্তা ওই গ্রামের নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ক্যাপটেন) জাহান ইয়ার বলেন, “মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই এ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এর পরিধি আরও বাড়বে।”