এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অন্তত ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
Published : 04 Apr 2024, 11:10 PM
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এসিএস টেক্সটাইল নামে একটি কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১ শ্রমিক ও এক পুলিশ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেতন ও বোনাসের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়।
তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
শ্রমিক বিক্ষোভের ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অন্তত ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত তারাব পৌরসভার বরপা এলাকায় এ ঘটনার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সড়ক যানজটমুক্ত হয়নি।
কারখানাটির শ্রমিকরা জানান, গত প্রায় চারমাস ধরে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঠিকঠাক দিচ্ছে না। কথা ছিল, ঈদের আগে বোনাসসহ সব পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার কারখানায় আসার পর শ্রমিকরা জানতে পারেন, মালিকপক্ষ তাদের বেতন-ভাতা না দিয়েই কারখানা ছুটি ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পরে তারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন।
শ্রমিক, পুলিশ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাজ শেষে বিকাল ৫টায় কারখানা থেকে বেরিয়ে কিছু শ্রমিক ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নেন। তারা বেতন-বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মিছিল শুরু করেন। প্রায় ২০ মিনিট সড়ক অবরুদ্ধ থাকার পর শিল্প পুলিশ ও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রোববার বেতন ও সোমবার বোনাস পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করেন। তখন শ্রমিকদের একাংশ সড়ক ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
তবে কিছু শ্রমিক তখনও কারখানার ভেতরে অবস্থান নিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে বকেয়া বেতন-ভাতার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করছিলেন।
পুলিশ জানায়, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেইসব শ্রমিক কারখানা থেকে বেরিয়ে মহাসড়কে নেমে এসে কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেন।
এসময় সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে। পুলিশও পাল্টা কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷
এ সময় তাদের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন শ্রমিকরা৷
শ্রমিকদের ছোড়া ইটের আঘাতে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহত হন বলে শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের দাবি।
শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পাওনা জানিয়ে তিনি বলেন, “শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার স্বাভাবিকভাবেই কাজে আসেন। রোববার তাদের বেতন ও সোমবার বোনাস দেওয়ার কথা ছিল। কাজ শেষ করে হঠাৎই কিছু শ্রমিক সড়ক অবরোধ করেন।”
শ্রমিকদের উত্তেজিত করে তোলার পেছনে কারখানার বাইরের একটি পক্ষ উস্কানি দিয়েছে বলে দাবি এই পুলিশ কর্মকর্তার।
তিনি বলেন, “বিকালে মালিকপক্ষ রোববারের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধের আশ্বাস দেওয়ার পর শ্রমিকরা চলে যান।
“অন্ধকার হওয়ার পর একটি পক্ষ বাসে ইট-পাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর চালায়। আমরা তখন তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে আমাদের ওপরও হামলা চালায়। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ তখন কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে।”
এ ঘটনায় কারখানার মালিক পক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, মহাসড়ক অবরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সড়কটির বিভিন্ন অংশে যানজট তৈরি হয়। সন্ধ্যায় মহাসড়কটির কাঁচপুর থেকে ভুলতা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যাত্রীদের এক থেকে দেড়ঘণ্টা পর্যন্ত যানজটের ভুগান্তি পোহাতে হয়েছে।
ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আলী আশ্রাফ মোল্লা বলেন, “আমরা সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি।”