মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে দুদকের গণশুনানি বগুড়ায়

দুদক প্রধান কার্যালয়ের কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে; গণশুনানি করে দুর্নীতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2023, 06:02 PM
Updated : 1 March 2023, 06:02 PM

সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে বগুড়ায় গণশুনানি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের-দুদক।

জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বুধবার সকালে শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে সেবাদাতা ও সেবা গ্রহীতাদের উপস্থিতিতে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, গণশুনানি করে দুর্নীতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে প্রত্যেকের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। দুর্নীতি সমাজকে কলুষিত করে এবং দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

দেশের বৃহৎ স্বার্থে দেশের মানুষকে দুর্নীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।

দুদকের বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মনিরুজ্জামানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের মহাপরিচালক আকতার হোসেন, রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক কামরুল আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোতাহার হোসেন, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হকসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, সেরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ।

এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা নিতে গিয়ে যারা হয়রানি হয়েছেন তাদের অভিযোগগুলি আমলে নেওয়া হয়।

শুনানিতে আসা ভূমি অফিসের সেবাগ্রহীতা রাবেয়া খাতুন বলেন, “খারিজ করে দেওয়ার জন্য প্রায় তিন মাস আগে ভূমি অফিসের শাহিন ৩০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। পরে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি শাহিনকে।”

শুনানিতে সদর উপজেলা ভূমি অফিসের ওই কর্মচারি শাহিন উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি টাকা দাবি করার অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন।

পরে দুদক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, টাকা দাবি করার বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে। এটা প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা হবে। 

শুনানির শুরুতে বিআরটিএ দপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়। এ সময় তিন জন অভিযোগ করেন ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করে পরীক্ষায় পাশ করেছেন। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তারা লাইসেন্স পাননি।

অভিযোগটি আমলে নিয়ে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে জেরা করেন দুদক কমিশনার। বিআরটিএকে সেবা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন।

হাসপাতালের সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দাবির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন বগুড়ার সদরের গোকুলের বাসিন্দা হেলাল। তিনি দু মাস আগে তার অসুস্থ মাকে নিয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। কিন্তু চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে তাকে ঘুষ দিতে হয়।

হেলাল অভিযোগ করেন, তার মাকে ভর্তি করানোর সময় ২০০ টাকা দিতে হয় হাসপাতাল কর্মচারীকে। পরবর্তীতে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুইল চেয়ারের প্রয়োজন হলে আরেক কর্মচারীকে ২০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।

এ ছাড়াও নার্সদের দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ করেন হেলাল।

এ বিষয়ে শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “ওই সময় সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতাম। তবে বিষয়টি খোঁজ করা হবে।”

এ সময় দুদক কমিশনার বলেন, এসব অভিযোগের কারণে এমন গণশুনানিতে আপনাদের আসাটাই লজ্জার। আপনারা ব্যবস্থা নিবেন সেটা পরের বিষয়। কিন্তু হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে অভিযোগ পুরোনো। এ জন্য আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত।

“সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ে আপনাদের কাছে আসে। আপনারা নিজেদের সেবার মান উন্নত করবেন, এটাই আমাদের কাম্য।” 

ধুনটের চিথুলিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম অভিযোগে বলেন, মাদ্রাসার সুপার জাল সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি করছেন। তাকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করার পরও তিনি জোর করে সেখানে কিছু লোকের সহায়তায় অবস্থান করছেন।

“চেক জালিয়াতিসহ সাবেক সভাপতি আব্দুল হান্নানের সঙ্গে মাদ্রাসার জমি বিক্রি করেছেন। অবৈধভাবে থাকার পরও নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন।”

বর্তমান সভাপতি নজরুল ইসলামের ঘুষ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

তখন দুদক কমিশনার বললেন, এটা দুদকের তদন্ত শেষে প্রমাণ হলে মামলা হবে। তবে নজরুল ইসলামের বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

বেলা ৩টা পর্যন্ত এই গণশুনানি চলে। এর মধ্যে হাসপাতাল, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস, শিক্ষা অফিস, সড়ক ও জনপদ দপ্তরের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সাধারণ মানুষ গণশুনানিতে অভিযোগ জানায়।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বগুড়া সদরের সরকারি দপ্তরের দুর্নীতি-সমস্যা নিয়ে অভিযোগ সংগ্রহ শুরু হয়। এই সময়ে মোট ৯৭টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে গণশুনানিতে ৩৪টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।

গণশুনানিতে বগুড়া জেলা দুদক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান ও অন্য কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা গণশুনানিতে সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া জেলার সকল সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সদর উপজেলার সাধারণ মানুষ গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।