জয়পুরহাটে বিকল্প ফসল ভুট্টার ‘আশাতীত’ ফলন

কৃষকরা জানান, ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাচ্ছেন তারা।

মোমেন মুনিজয়পুরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2023, 01:56 PM
Updated : 2 June 2023, 01:56 PM

জয়পুরহাটে গত কয়েক বছর ধরে বোরো ধানের বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টার চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

রোগবালাই ও উৎপাদন খরচ কম এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জেলায় দিন দিন ভুট্টার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জয়পুরহাটের মাটি অন্য সব ফসলের মত ভুট্টা চাষের জন্যও উপযোগী জানিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচলক রাহেলা পারভীন বলেন, ২০২২-২০২৩ রবি মৌসুমে ৭৮৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা ছাড়িয়ে প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে এ ফসলের চাষ হয়েছে। বিএডিসির পক্ষ থেকে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ভুট্টার বীজ সরবরাহ করায় বিশেষ করে সদর, পাঁচবিবি ও আক্কেলপুর উপজেলায় ভুট্টার চাষ বেশি হওয়ার একটি কারণ।

উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার মেট্রিকটন নির্ধারণ করা হলেও তা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান রাহেলা পারভীন।

তিনি আরও জানান, পোল্ট্রি শিল্পের মূল উপাদান ভুট্টা। দেশে পোল্ট্রি শিল্পের বৃহত্তম জেলাগুলোর একটি জয়পুরহাট। এখানে পোল্ট্রি শিল্পকে ঘিরে ১১টি ফিড মিল গড়ে উঠেছে। এসব ফিড মিলের ফিড তৈরির কাঁচামালের প্রধান উপকরণ ভুট্টা। এছাড়া জেলায় হাজার হাজার গবাদিপশু লালন-পালন করা হয়। সেইসব পশুর খাদ্যের জন্যও ভুট্টার প্রয়োজন হয়। ফলে বাজারে ভুট্টার চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় জেলায় ভুট্টার আবাদও বেড়েছে।

সরেজমিনে জয়পুরহাট সদর উপজেলার দাদরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কোনো কোনো কৃষকের বাড়িতে ভুট্টা কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ক্ষেতে ভুট্টা সংগ্রহের পর্যায়ে আছে।

ওই গ্রামের ভুট্টা চাষিরা জানান, অন্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে এক দিকে রোগবালাই ও উৎপাদন খরচ কম আবার বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় তারা ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

এবার উর্বরতা ভেদে প্রতি বিঘায় ৮/১০ হাজার টাকা খরচ করে ২০/২২ মণ পর্যন্ত ভুট্টা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তারা। অন্যদিকে, বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী প্রতি বিঘা জমিতে খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের লাভ থাকছে ১৪/১৫ হাজার টাকা।

দাদরা গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন, “গত বছর ১ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলাম। ভালো লাভ হওয়ায় এ বছর ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। কাটার পর মাড়াই করে প্রতি বিঘায় গড়ে ১৮ মণ হিসাবে ৩৬ মণ ভুট্টা পেয়েছি। এখন দাম ভালো, আরও ২/৩ মাস পর আরেকটু দাম পাওয়া গেলে তখন বিক্রি করব। এ ছাড়া অন্তত ৩ মাস জ্বালানি হিসেবে ভুট্টার গাছ ব্যবহার করতে পারব।”

সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিন, পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জি গ্রামের লিটন হোসেন, একই উপজেলার নন্দইল গ্রামের বেলাল হোসেনসহ অনেক চাষি বলেন, ভুট্টার চাষে সার, সেচসহ উৎপাদন খরচ যেমন কম, তেমনি পোকা মাকড়ের আক্রমণও কম। আবার পোল্ট্রি, মৎস্য ও গোখাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা থাকায় দরও ভালো রয়েছে।

তারা জানান, বর্তমানে প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ১৮/২০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি মণ ভুট্টার বাজার দর ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা । সে হিসাবে প্রতি বিঘা জমির ভুট্টার দাম আসে সাড়ে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিঘা প্রতি ৮/১০ হাজার টাকা খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাহেলা পারভীন বলেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বিকল্প ফসল হিসেবে জেলায় প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় দেশে উৎপাদনের পরও বিদেশ থেকে ভুট্টা আমদানি করতে হয়। আমদানি রোধে ভুট্টার আবাদ বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভুট্টার চাষ আরও বাড়াতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।