কুমিল্লা সিটির ৭৭৭ অস্থায়ী কর্মীর বেতন স্থগিত, ছাঁটাই আতঙ্ক

মেয়র বলেছেন, যাছাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কর্মী বাদ পড়বেন।

আবদুর রহমানকুমিল্লা প্রতিনিধি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2022, 09:46 AM
Updated : 8 August 2022, 09:46 AM

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর সময়ে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়া ৭৭৭ কর্মীর বেতন ‘যাচাই-বাছাইয়ের জন্য’ স্থগিত করা হয়েছে; তারা এখন ছাঁটাই আতঙ্কে ভুগছেন।

কুমিল্লা সিটির তৃতীয় নির্বাচনে ‘বিএনপির’ মনিরুল হক সাক্কুকে পরাজিত করে গত ৭ জুলাই নতুন মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত।

তার এক মাসের মাথায় এই সিদ্ধান্ত এলো নগর ভবন থেকে। এর ফলে ৮-১০ বছর ধরে স্থায়ী হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করা এসব অস্থায়ী কর্মী এখন ছাঁটাইয়ের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এমনটি হলে পরিবার নিয়ে বিপদে থাকার কথাও বলেছেন অনেকে।

সাক্কু ‘প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি অস্থায়ী লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন’ এমন অভিযোগ করে মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, “সিটি করপোরেশনের স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর চেয়ে নয় গুণের বেশি দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মী। এটা মেনে নেওয়া যায় না। অন্য কোথাও এমন পরিস্থিতি নেই।

“অস্থায়ী কর্মীদের বেশির ভাগেরই কাজ নেই। এতে সিটি করপোরেশনের বিপুল অঙ্কের টাকা বেতন দিতে হচ্ছে। তাই এসব কর্মীর জুলাই মাসের বেতন সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছি। তালিকা করে প্রয়োজনীয়সংখ্যক লোক রাখব। প্রয়োজনীয়তা না থাকলে অন্যরা বাদ যাবেন।”

অস্থায়ী কর্মীদের সাধারণত মাসের প্রথম দিকে কয়েকটি ধাপে বেতন দেওয়া হতো। তবে রোববার বিকেল পর্যন্ত ওই ৭৭৭ কর্মচারীর কেউই জুলাই মাসের বেতন পাননি। তবে চলতি সপ্তাহে তাদের বেতন পরিশোধ করে নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। 0

অন্তত তিনজন অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীর ভাষ্য, মনিরুল হক সাক্কু ছিলেন বিএনপির মেয়র। তিনি কর্মী নিয়োগে বিএনপির সমর্থক বা তার নিজের অনুসারীদের বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন, এটাই স্বাভাবিক।

একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের। এজন্য তিনি আগের মেয়রের বিপরীত কাজ করবেন বলে সবার মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে। এজন্য কর্মীদের মধ্যে ছাঁটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে।”

অরেকজন বলেন, “অনেকে ৮ থেকে ১০ বছর ধরে দৈনিক হাজিরাভিত্তিতে কাজ করেছেন। তাদের আশা ছিল, এক সময় হয়তো চাকরি স্থায়ী হবে। এখন তো সেই সম্ভাবনাও কমে গেছে এই ৭৭৭ জনের ক্ষেত্রে। কাজ হারালে অনেকে পরিবার নিয়ে বিপদে পড়বেন।”

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের বর্তমানে স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ৮৩ জন। তাদের প্রতি মাসে ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ৫৫ টাকা বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

৭৭৭ অস্থায়ী কর্মী আগে ৩০০ টাকা করে দৈনিক বেতন পেতেন। চলতি বছরের মে মাসে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে মনিরুল হক সাক্কু তাদের হাজিরা ৩৫০ টাকা করেন। তাদের পেছনে সিটি করপোরেশনের খরচ প্রতি মাসে ৭২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯০ টাকা।

কুমিল্লা সিটির অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, ৫৯০টি পদ সৃজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭৯ জনকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হলে লোকবল সংকট দূর হয়ে স্থায়ী জনবল বাড়বে এবং দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মীর সংখ্যা কমবে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট কাউন্সিলর আছেন ৩৬ জন। তাদের প্রত্যেকের ওয়ার্ডে দৈনিক হাজিরাভিত্তিক পাঁচজন করে কাজ করছেন। ৩৬ জনের আওতায় প্রতিটি ওয়ার্ড পরিচ্ছন্নতার কাজে ২০ জন করে রয়েছে।”

“আমাদের ময়লা ফেলার ট্রাক আছে ২০টি। প্রতিটিতে কাজ করে পাঁচজন করে। এ ছাড়া পার্ক, বাজার, মার্কেট, সিটি করপোরেশনের প্রধান ও দক্ষিণের কার্যালয়ে লোকবলের সঙ্কট থাকায় দৈনিক হাজিরাভিত্তিক এসব কর্মচারীরা বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করছেন।”

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এখনও চূড়ান্তভাবে না পাওয়ায় স্থায়ীভাবে লোকবল নিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে বলেও জানান সিইও।

তিনি আরও বলেন, “শুধু কুমিল্লা নয়, দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশনে এভাবে দৈনিক হাজিরাভিত্তিক লোক দিয়ে কাজ করানো হয়। আমাদের এখানে আরও লোক প্রয়োজন আছে।”

৭৭৭ কর্মীর বেতন স্থগিত প্রসঙ্গে সিইও বলেন, “বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দৈনিক হাজিরাভিত্তিক এতো লোকের প্রয়োজন আছে কিনা, তারা ঠিকভাবে কাজ করেন কিনা এবং তারা সরকারবিরোধী কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করছেন কিনা- এসব বিষয় যাছাই-বাছাই করা জরুরি।

“কারণ দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মীরা তো সরকারবিরোধী কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে থাকতে পারবেন না। এসব বিষয় বিষয় যাছাই-বাছাইয়ের জন্য তাদের জুলাই মাসের বেতন সাময়িক স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র।”

২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ পরপর দুই নির্বাচনে মেয়রের আসনে বসেন বিএনপি থেকে সম্প্রতি বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু।