ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে খুঁটি ভেঙে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। ফলে তিনদিন ধরে বিদ্যুৎহীন টেকনাফ উপজেলার শাহ পরীর দ্বীপে দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট।
মোখায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের জেলেপল্লীগুলো। এখানকার ৯৫ ভাগ ঘরবাড়িই বিধ্বস্ত হয়েছে।
সেগুলো মেরামতের ব্যস্ততার মধ্যেই এক-দুই কিলোমিটার দূর থেকে পানি এনে কোনোরকমে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন এই জালিয়া পাড়ার প্রায় ৫০০ পরিবার।
শাহপরীর দ্বীপ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে এই ওয়ার্ডের জেলেপল্লীগুলি একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। জালিয়া পাড়া, ক্যাম্প পাড়া, বেড়িবাঁধের পূর্ব-পশ্চিম পাশে বেড়ার তৈরি ৪০০টি ও টিনশেডের ২০০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
“দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০টির মতো। অনেক দোকানের মালামাল নষ্ট হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের পর সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানির। পুরো জেলে পল্লীতে বিদ্যুৎ না থাকায় এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।”
জালিয়াপাড়া বেড়িবাধ এলাকার আবু সাইদ বলেন, এলাকায় পানি লবণাক্ত হওয়ায় আগে থেকেই সংকট চলছিল। এখানে ডিপটিউবওয়েলের সংখ্যাও কম। তারপরও পাইপ দিয়ে দুই-তিন কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনতো জালিয়াপাড়ার মানুষ।
কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে এখন বিদ্যুৎ নেই। তাই ডিপ-টিউবওয়েলে পানি তুলতে পারছে না, আবার পাইপের মাধ্যমেও আনতে পারছে না। ফলে পানি আনতে এক-দুই কিলোমিটার দূরে যেতে হয়।
বেড়িবাঁধের উপর দেখা হয় নূর কায়েসের সঙ্গে। কলসি কাঁধে নিয়ে পানি আনতে যাওয়ার পথে এই কিশোর জানায়, বেড়িবাধ সংলগ্ন তাদের ছোট ঘরটি ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে গেছে। তার বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই ঘর গোছাতে ব্যস্ত। বাড়িতে খাবার পানি আনার দ্বায়িত্ব পড়েছে তার কাঁধে।
সেজন্য দু’ দিন ধরে এক কিলোমিটার দূর থেকে পানি বয়ে আনছে এই কিশোর।
সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, “ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে আমার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শাহপরীর দ্বীপে। তার মধ্যে জালিয়াপাড়া জেলে পল্লীগুলো খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
“আগে থেকে জালিয়াপাড়া বেড়িবাঁধ এলাকায় পানির সংকট ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের পর এই সংকট আরও বেড়েছে। আশা করি, বিদ্যুৎ আসলে এই সংকট কেটে যাবে।”
টেকনাফ পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম আবুল বশর আজাদ জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখায় আঘাতে শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় ১৪টি খুঁটি ভেঙ্গে গেছে, তার ছিড়ে গেছে।
“আমাদের কয়েকটি টিম সোমবার থেকে কাজ করছে ওই এলাকায়। আমরা চেষ্টা করতেছি। আশা করছি, দুই এক দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।”