পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) ১৩তম জাতীয় সম্মেলন শুরু হয়েছে।
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি তথা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত প্রতিক্রিয়াশীল, সুবিধাবাদী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলুন’ তাদের সম্মেলনের শ্লোগান।
রোববার সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়াপাড়া মারমা উন্নয়ন সংসদ প্রাঙ্গণে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি বিভুরঞ্জন চাকমা; আর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি সংগঠনের বিদায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি সুভাষ কান্তি চাকমা।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে বিভুরঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, প্রধান অতিথি সুভাষ কান্তি চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক অংশুমান চাকমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুজন চাকমা ঝিমিট, যুব সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক প্রিয়দর্শী চাকমা, জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আনন্দ মোহন চাকমা, জুম্মশরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুল, জেলা ঠিকাদার সমিতির সভাপতি রবি শংকর তালুকদার প্রমুখ।
প্রথম অধিবেশনে সঞ্চলনা করেন বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা।
পাহাড়ে দীর্ঘ সময়ের সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে পার্বত্যচুক্তি করে। ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর এ চুক্তির বিরোধিতা করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) জন্ম হয় প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে।
সেই থেকে পাহাড়ে সংঘাত নতুন মাত্রা পায়।
প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছর পর ভেঙে যায় জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)। সন্তু লারমার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল এম এন লারমার আদর্শের নামে নতুন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-লারমা) গঠিত হয়। ক্রমান্বয়ে এই তিন আঞ্চলিক দল সংঘাতে নামে। খুন, অপহরণ, গোলাগুলি ও আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে মেতে ওঠে তারা।
এরপর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর প্রসীত খীসার নেতৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করে ইউপিডিএফ ভেঙে যায়। ওই অংশের নেতারা ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক গঠন করেন।
এরপর অধিকার আদায়ের নামে পাহাড়ে শুরু হয় চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুনোখুনি।
জেএসএসের (এমএন লারমা) সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল দীর্ঘ সময়েও তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হয়নি। বেশির ভাগ ধারাই এখনও অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস–এমএন লারমা) বিদায়ী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক কাকলী খীসা, আইন বিষয়ক সম্পাদক সুদর্শন চাকমাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
তিন দিনব্যাপী এই জাতীয় সম্মেলন মঙ্গলবার শেষ হবে।