“ভাঙতি টাকা দিয়ে টোল পরিশোধ করতে চালকদের সচেতন করা হচ্ছে।”
Published : 11 Jun 2024, 11:52 PM
কোরবানির ঈদের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে বাড়ছে চাপ; আর সেই সঙ্গে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের মাথায় ফিরে আসছে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অংশে ভোগান্তির পুরনো শঙ্কা।
ঈদ যাত্রায় উত্তরাঞ্চলগামী মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ে। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের অন্তত ২৩টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। প্রতিবছর দুই ঈদে যানজট ও ভোগান্তিকে সঙ্গী করে এ পথ দিয়ে ঘরে ফেরে মানুষ।
ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো জেলার কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেইনের সড়কের সুবিধায় দ্রুত আসতে পারে।কিন্তু এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে উঠতে লেইন মাত্র দুটি। ২৬ বছরের পুরনো বঙ্গবন্ধু সেতুও দুই লেইনের।
ফলে ঢাকা থেকে চার লেইন ধরে চলা যানবাহন এলেঙ্গায় এসে দুই লেইনের মুখে আটকে যায়; সৃষ্টি হয় যানজট।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এবার ঈদুল ফিতরের আগে ৪ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ৫৩টি গাড়ি বিকল হয়, ৮৩টি দুর্ঘটনা ঘটে।ফলে ঈদ যাত্রার শেষ দিকে এসে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
দুই মাসের মাথায় ঈদুল আজহার আগে এসে সেই ভোগান্তির স্মৃতি ভাবাচ্ছে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালক ও যাত্রীদের।
এলঙ্গায় কথা হয় উত্তরবঙ্গগামী একতা পরিবহনের চালক ইয়াকুব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “অতীতে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ফিরতে ২৫ থেকে ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে; সে এক চরম ভোগান্তি। এবার ঈদেও নানা কারণে যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
চার লেইন-দুই লেইনের জটিলতার পাশাপাশি বৃষ্টি, পশুবাহী ট্রাক বিকল হওয়া, দুর্ঘটনা, চালকদের বেপরোয়া গতির কথাও তিনি বলেন।
এনা পরিবহনের চালক মজিদ মিয়া অবশ্য মনে করেন, পুলিশ ‘সঠিকভাবে’ দায়িত্ব পালন করলে এই পথে ঈদযাত্রায় যানজট কম হবে।
তিনি বলেন, “এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক দুই লেইন; বঙ্গবন্ধু সেতুও দুই লেইনের। বঙ্গবন্ধু সেতুর লেইনের প্রস্থ বাড়ানো গেলে যানজট অনেকটা কম হবে।“
এছাড়া ঈদের সময় গাড়ির চাপ বেড়ে গেলে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ে গতি ধীর হয়ে যায়। তাতেও দুই লেইনের সেতু দিয়ে পারাপারে অনেক সময় লেগে যায়। তাতে জট বাঁধে পেছনের মহাসড়কে।
অবশ্য গত দুই বছর চার ঈদে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ প্রশাসনের নানা উদ্যোগে মোটামুটি কম ঝামেলায় বাড়ি ফিরতে পেরেছে মানুষ। এবারও ঈদযাত্রায় যানজট নিরসনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ ও জেলা পুলিশ।
মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত করার কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মিজান সারোয়ার বলেন, ওই ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ঈদুল ফিতরে চার কিলোমিটার ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া হয়েছিল। এবারের ঈদ যাত্রার জন্য নতুন করে আরও দুই কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ে ধীর গতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আাহসানুল কবির পাভেল বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন পারাপার হলেও ঈদে ৫৫ হাজারের বেশি গাড়ি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়।
স্বাভাবিক সময়ে সেতুর উভয় প্রান্তে ১২টি বুথে টোল আদায় করা হয়; আর ঈদে গাড়ির জট এড়াতে টোল আদায় করা হয় ১৮টি বুথে।
এছাড়া কালিহাতীর এলেঙ্গা থেকে নলকা সেতু পর্যন্ত সড়ক সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয় বলে জানান তিনি।
পাভেল বলেন, “যত ফিটনেসবিহীন যানবাহন কম আসবে, দুর্ঘটনা ও যানবাহন বিকল হওয়ার ঘটনা ততই কম হবে। তখন যানজটের আশঙ্কাও কম থাকবে। সেতুর পাশে যখন যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকবে, তখন যানজটও বাড়বে।
“সেজন্য ভাঙতি টাকা দিয়ে টোল পরিশোধ করতে চালকদের সচেতন করা হচ্ছে। সেটা করলে টোল পরিশোধ করতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না।”
ঈদুল ফিতরের মত এবারও মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা টোলবুথ স্থাপন করা হচ্ছে জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, “রেল সেতুর প্রস্থ বৃদ্ধি করার জন্য ঢাকায় আবেদন করা আছে। রেল সেতুর কাজ শেষ হলে এ বিষয়ে প্দক্ষেপ নেওয়া হবে।
“ইতোমধ্যে অন্য সময়ের চেয়ে মহাসড়কে পশুবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল এখনও স্বাভাবিক রয়েছে।”
এলেঙ্গা হাইওয়ে থানার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. জাহিদ বলেন, “হাইওয়ে রোডে কোনটা ফিটনেসবিহীন গাড়ি, সেটা তো বোঝা মুশকিল। যখন কোনো বাস বা ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে, তখন আমরা সেটাকে আটক করে মামলা দিই।”
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে কয়েকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।
তিনি বলেন, “ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গগামী সকল যানবাহন এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত একমুখী করে দেওয়া হবে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর গোলচত্বর হয়ে ভূঞাপুর দিয়ে এলেঙ্গা সড়ক হয়ে ঢাকায় চলে যাবে।তাতে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনগুলো দুই লেনের সুবিধা পাবে।”
কায়সার বলেন, পশুবাহী ট্রাক এরইমধ্যে চলাচল শুরু করেছে। এছাড়া উত্তরবঙ্গ থেকে মৌসুমি ফলের ট্রাকভর্তি গাড়িও ঢাকার দিকে যাচ্ছে এখন।
“মহাসড়কে পরিবহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে জেলা পুলিশের সাত শতাধিক সদস্য পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগেও যাতে পুলিশ মাঠে থাকে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সভা হয়েছে। মহাসড়কে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ জেলা প্রশাসকের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন।