নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে হত্যা মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার সময় ‘হামলাকারীরা গুলি চালালে’ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে র্যাবের মামলায় দাবি করা হয়েছে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় বরগাঁ এলাকায় র্যাবের ওই অভিযানের মধ্যে গোলাগুলিতে প্রয়াত কদম আলীর ছেলে আবুল কাশেম (৬৫) নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন আরও একজন।
এরপর রোববার ভোরে র্যাব ১১-এর আদমজী ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট আফিসার মো. নাসিরউদ্দিন ২১ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এতে ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭০ থেকে ৮০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ছয়জনকে।
মামলায় ব়্যাবের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগ এনে বলা হয়, “… আসামিরা একই উদ্দেশ্যে বেআইনি জনতা দলবদ্ধ হয়ে সরকারি দায়িত্ব পালনে র্যাব সদস্যদের বাধা প্রদানসহ আঘাত ও গুলি করে সাধারণ ও গুরুতর রক্তাক্ত জখমসহ একজন ব্যক্তিকে খুন“ করে।
র্যাব জানায়, শুক্রবার সোনারগাঁয়ে এক নারীর গলাকাটা লাশ পাওয়া গিয়েছিল৷ সেই মামলার আসামি মো. সেলিমকে ধরতেই মধ্যরাতে বরগাঁ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে গিয়ে তারা আক্রান্ত হয়েছিলেন।
অভিযানে থাকা র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তানভীর মাহমুদ পাশা বলেছিলেন, “আমরা আসামিকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে আসার সময় কিছু দুষ্কৃতকারী আসামিকে ছিনিয়ে নিতে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে ব়্যাবের ওপর হামলা করে, গুলি করে৷ তখন আত্মরক্ষার্থে র্যাব সদস্যরা পাল্টা গুলি ছুড়ে আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে ব়্যাব।
“পরে সকালে নিউজ পেয়েছি যে, একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এবং একজন আহত আছেন।”
মামলায় বলা হয়েছে, আসামি মো. সেলিম ঘর থেকে একটি ছোরা নিয়ে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন তাকে আটক করা হয়। হাতকড়া পরিয়ে তাকে নিয়ে আসার সময় চিৎকার শুরু করে। তখন আশপাশের লোকজন এসে আসামিকে ছিনিয়ে নিতে অতর্কিতে র্যাব সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। তখন প্রথমে তাদের কথা বলে বুঝিয়ে নিবৃত্তের চেষ্টা করা হয়। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বেআইনি জনতা দলবদ্ধ হয়ে তীব্রভাবে আক্রমণ শুরু করে।
আসামিকে ছিনিয়ে নিতে রড, রামদা, ছোরা, বাঁশের লাঠি হাতে বিভিন্ন দিক থেকে র্যাব সদস্যদের এলোপাথাড়ি মারপিট শুরু করে। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা গুলি ছুড়তে থাকে। তাদের ছুড়া গুলিতে একজন ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়িয়া যায় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, এ সময় গুলি ও ইটের আঘাতে র্যাব সদস্য মো. শহীদুল ইসলাম, এএসআই মো. মুজিবুর রহমান, তাপস কান্তি বর্মণ, বিনিময় ওঝা এবং রাজু আহমেদ রক্তাক্ত জখম হয়।
এই মামলায় নিহত আবুল কাশেমের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪০), তিনি পেশায় জামদানি কারিগর, তার তিন ভাতিজা জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), আমানুল্লাহ (৪২) হযরত আলী এবং ২৫ বছর বয়সী নাতি মো. রুবেল মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার আদালতে পাঠানো হয়।
পরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সানজিদা সারোয়ারের আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া হত্যা মামলার আসামি মো. সেলিমকেও এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
শনিবার রাতে জানাজা শেষে বরগাঁ স্থানীয় কবরস্থানেই দাফন করা হয় আবুল কাসেমকে।