ইফতারের প্রস্তুতির সময় হামলাকারীরা ঘরে ঢুকে জুবায়েরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। এতে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন।
Published : 30 Mar 2024, 09:45 AM
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় ‘মাত্র ৫০০ টাকা পাওনার’ বিরোধে প্রতিপক্ষের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে এক যুবক।
তবে স্বজনদের দাবি, পাওনা টাকার বিরোধের প্রচার করে মূলত জমি জবরদখলের ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে ভূমিদস্যুদের একটি চক্র।
টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ইফতারের আগ মুহূর্তে টেকনাফের সদর ইউনিয়নের নাজির পাড়ার একটি বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
নিহত মোহাম্মদ জুবায়ের (২২) একই এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দর্জি শ্রমিক।
স্বজনদের বরাতে ওসমান গনি বলেন, মোহাম্মদ জুবায়ের স্থানীয় মো. কায়েসের দোকান থেকে বাকিতে কিছু মালামাল কিনেছিলেন। ৫০০ টাকার কিছু বেশি এ পাওনা নিয়ে বুধবার উভয়ের মধ্যে তর্কাতর্কির ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়ভাবে ওই বিরোধের মীমাংসাও হয়।
“নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, ঘটনার ব্যাপারে দোকানি কায়েস তার মামা নজমুদ্দিনকে জানায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় নজমুদ্দিনের নেতৃত্বে কয়েকজন লোক জুবায়েরের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা জুবায়েরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। এতে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন।“
ওসি বলেন, গুলিবিদ্ধ জুবায়েরকে স্বজনরা টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
চমেকে নেওয়ার পথে রাত ১১টার দিকে রামু উপজেলার চাবাগান এলাকায় জুবায়ের মারা যান বলে জানান ওসমান গনি।
নিহতের বড় ভাই আব্দুস সাত্তার বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যায় জুবায়ের বাড়িতে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বারের ইন্ধনে নজমুদ্দিন ও তার ভাই ফিরোজের নেতৃত্বে ৮-১০ জন আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা জুবায়েরকে লক্ষ্য করে পর পর দুইটি গুলি ছুড়ে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে তাদের মালিকানাধীন কিছু জমি জবরদখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে ইউপি সদস্য এনামুল হকের নেতৃত্বে প্রভাবশালী একটি চক্র। মূলত সেটাকে আড়াল করতেই চক্রটি আমার ভাইকে হত্যার ঘটনাটি পাওনা টাকার বিরোধকে পুঁজি করে ঘটেছে বলে বিভিন্ন মহলে প্রচারে নেমেছে।“
নিহতের নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশী রবিউল আলম বলেন, “ইউপি সদস্য এনামুল হকের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় জমি জবরদখল, মাদকপাচার ও সাগরে দস্যুতাসহ নানা অপরাধ করে আসছে।
এলাকার সাধারণ মানুষ কোথাও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পায়। কেউ বিরুদ্ধাচরণ করলে খুন ও মিথ্যা মামলায় আসামিসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় এ বাসিন্দা।
তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এনামুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পরও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
ওসি ওসমান গনি জানান, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।