“নারীদের কাছে পাকিস্তানি থ্রি পিসের মধ্যে এবার গর্জিয়াস টাইপের চাহিদাই বেশি। তবে লেহেঙ্গা বা পাখি ড্রেসও চলছে না এবার।”
Published : 21 Mar 2025, 11:52 AM
“বাচ্চাদের ড্রেস ও জুতা কেনা হয়ে গেছে। এখন শ্বশুর-শাশুড়ি, আর হাজবেন্ডের জন্য কেনাকাটা বাকি। নিজের জন্যও টুকটাক কিনেছি। কিন্তু ঈদের শাড়ি এখনও পছন্দ হয়নি, খুঁজছি।” কথাগুলো বলছিলেন ঝালকাঠি শহরের বাসিন্দা মৌ আক্তার।
মৌয়ের সঙ্গে কথা হয়, ঝালকাঠি শহরের মনোহারিপট্টি লাগোয়া ‘আঁচল বস্ত্রবিতান’ নামের একটি দোকানে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায়ও সেখানে েশপিং করতে আসা লোকজনের বেশ ভিড় দেখা গেল।
ঈদকে সমানে রেখে ঝালকাঠির শহরের সদর চৌমাথা, কুমারপট্টি, কাপড়িয়া পট্টি ও দুর্গাপ্রসাদ সড়কের দোকানগুলোতে বেচাকেনা জমে উঠেছে। সব বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুদের জন্য পোশাক ও থান কাপড়ের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে সেখানে। দোকানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকছে।
এবার ঈদবাজারে পাকিস্তানি থ্রি-পিসের চাহিদাই বেশি। তবে লেহেঙ্গা বা পাখি ড্রেস এবার তেমন চলছে না বলে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাপড়িয়া পট্টি থেকে কুমারপট্টি পর্যন্ত অধিকাংশ দোকানে রয়েছে থ্রি-পিসের পসরা। গাউনপট্টি ও দুর্গাপ্রসাদ সড়কের দোকানে রয়েছে দেশি-বিদেশি থান কাপড়। এছাড়া প্রায় সব দোকানেই দেশি-বিদেশি কাপড়ের থ্রি-পিস, রেডিমেড ও কাটা কাপড় পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষ করে দুর্গাপ্রসাদ সড়কের দুই পাশে দেশি-বিদেশি থান কাপড় থেকে শুরু করে শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রি-পিসের দোকান বেশি। শিশুদের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে জিরো পয়েন্ট শপ, পোশাক বাড়ি ও ‘রঙ’ সহ শহরের বিভিন্ন দোকানে।
কাপড়িয়া পট্টি সড়কের ‘ময়ূরী বস্ত্রবিতানের’ মালিক জামাল হোসেন বলছিলেন, “এ বছর পাকিস্তানিসহ বিভিন্ন থ্রি-পিস, শাড়ি, কাটা কাপড়, পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্টের কাপড়ের চাহিদা অনুযায়ী সব পণ্যের মজুত থাকলেও দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে দেশের পরিস্থিতির তুলনায় বিক্রি ভালোই চলছে।
“অনেক ড্রেসই মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। তারপরও চেষ্টা করি সীমিত লাভ করে হলেও কাউকে খালি হাতে ফেরত না দিতে।”
তিনি বলেন, “ইন্ডিয়ান ও দেশি জর্জেটের চেয়ে এবার পাকিস্তানি জর্জেটটা বেশি চলছে। সুতি থ্রি-পিস ৪৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কারুকাজ করা থ্রি-পিস ৭০০-১৬০০ টাকায় এবং পাকিস্তানি থ্রি-পিস ২২০০-৩৮০০ টাকায় বিক্রি চলছে।”
‘ময়ূরী বস্ত্রবিতানে’ কথা হয় শহরের বাসিন্দা দৃষ্টি আক্তারের সঙ্গে। স্বামী ও এক বছরের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন তিনি।
দৃষ্টি বলেন, “ঈদ উপলেক্ষে সবার জন্য টুকটাক কিনছি, ঘুরেঘুরে দেখছি যা পছন্দ হয় তা নিচ্ছি। দোকানে এসে পাকিস্তানি ড্রেস খুঁজছি, অনলাইনেও দেখেছি। তবে ঝালকাঠিতে মোটামুটি পছন্দের সব জিনিষই পাওয়া যাচ্ছে।”
ডাক্তারপট্টি ও কাসারি পট্টির সংযোগস্থলে ‘বোরকা হাউজের’ মালিক মনোয়ার হোসেন জুয়েল বলেন, “ক্রেতাদের পছন্দ ভালো। কিন্তু এবার অনেক কিছুই ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। পছন্দ হওয়ার পর ক্রেতা তার বাজেটের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। এবারে পাকিস্তানি থ্রি-পিস, রেডিমেড ড্রেস এবারে বেশি চলছে।”
এআরএস টাওয়ারের ‘সাথি কালেকশনের’ বিক্রেতা রাজু বলেন, “নারীদের কাছে পাকিস্তানি থ্রি-পিসের মধ্যে এবার গর্জিয়াস টাইপের চাহিদাই বেশি। সুতির মধ্যে হালকা কাজের থ্রি-পিসও ভালো চলছে। তবে সুতির মধ্যে গর্জিয়াসটা এবার চলছে না। এছাড়া লেহেঙ্গা বা পাখি ড্রেসও এবার চলছে না।”
মনোহারিপট্টি লাগোয়া আঁচল বস্ত্রবিতানের মালিক অমর সাহা বলেন, তার দোকানে ৪৫০-২০০০ টাকা দামের শাড়ি পাওয়া যায়, এরচেয়ে ভালো কোনো শাড়ি নেই।
অন্য ভাই সমর সাহা বলেন, “আমাদের গোডাউনে সর্বোচ্চ ৩৫০০-৪০০০ টাকা দামের শাড়ি আছে।”
কুমারপট্টির ‘খানদানী পাঞ্জাবি’ দোকানে কাশ্মিরি পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে সিকোয়েন্স পাঞ্জাবি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। শিশুদের জন্যও বাহারি রঙ আর ডিজাইনের নানান পাঞ্জাবি রাখা হয়েছে। দোকান মালিক মুকতাদির মিশুকে একটু পরপর পাঞ্জাবি গুছিয়ে রাখতে দেখা গেল। তবে তার দোকানেরর ক্রেতারা বলছেন, পাঞ্জাবির দাম এবারে অনেক বেশি।
নারীদের জামা ও লিনেন কাপড়ের গজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। চায়না কাপড় বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকায়। শাড়ির বাজারে জামদানি ও কাতান শাড়ির চাহিদা বেশি।
কুমারপট্টির একটি দোকানে মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক মুন্নি খানম স্বামীর সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, ব্যস্ততা ও রোজার কারণে দিনে কেনাকাটা করতে আসতে পারেন না। পছন্দের পণ্যগুলো সময় নিয়ে ঘুরেঘুরে কিনতে হয় তাই কেনাকাটার জন্য কয়েকদিন সময় নিয়ে আসেন। তিনি নিজের জন্য থ্রি-পিস, বাচ্চাদের জন্য পোশাক এবং স্বামীর জন্য পাঞ্জাবি কিনেছেন। এবার দাম অনেক বেশি তাই নিজেদের মতো দরদাম করে কিনতে হচ্ছে।
নারীদের কসমেটিকস আইটেমের জন্য ভিড় চোখে পড়ে সদর চৌমাথার ‘রূপকথার সাজঘর’-এ। মালিক সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, কসমেটিকস আইটেমটা অন্য মাসের তুলনায় একটু বেশি বেচাকেনা হয় ঈদ উপলক্ষে।
ঝিলিক স্টেরের রিপন মণ্ডলও জানান, বেচাবিক্রি ভালো চলছে।
ঈদকে সমানে রেখে জুতার বাজারেও বেচাকেনা ভালো। কুমারপট্টির ‘অনিক সুজ’-এর মালিক সাইফুল ইসলাম বছিলেন, নারী, শিশু ও পুরুষ সবার জন্যই ভালো সংগ্রহ রাখা হয়েছে। ক্যাজুয়াল, ফরমাল ও লোফার সু ভালো চলছে।