ক্ষমতার পালাবদলের পর সম্প্রতি এ মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
Published : 15 Sep 2024, 01:15 PM
নারায়ণগঞ্জের কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বর্ষপূর্তির একদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব জানিয়েছিল, এই হত্যা মামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে পেরেছেন তারা। যে কোনো দিন আদালতে জমা পড়বে অভিযোগপত্র।
কিন্তু এরপর দীর্ঘ দশ বছর এই হত্যা মামলার তদন্তে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি, জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন।
ক্ষমতার পালাবদলের পর সম্প্রতি এ মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিও জোরালো হয়ে উঠেছে।
মামলাটির তদন্ত দ্রুত শেষ করে তিন মাসের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
র্যাবের এই তৎপরতায় আশা দেখছেন সন্তান হত্যার ন্যায়বিচার পেতে সাড়ে ১১ বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসা ত্বকীর বাবা, সাংস্কৃতিক সংগঠক রফিউর রাব্বি।
ত্বকীর পরিবারের সদস্যদের বরাবরই অভিযোগ ছিল, এ হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের বাঁচাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নির্দেশে’ এই তদন্ত আটকে ছিল।
ত্বকী হত্যায় প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে সেসময় গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া র্যাবের খসড়া তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল।
আজমেরী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ভাতিজা। সম্প্রতি এ মামলায় গ্রেপ্তার চারজনও আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ।
রফিউর রাব্বি বলেন, “এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ৫ মার্চ র্যাবের তদন্তে সব বেরিয়ে এসেছিল। ওসমান পরিবারের টর্চার সেলে ত্বকীকে কীভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলা হয়, তার সবই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল র্যাব।
“কিন্তু যখনই শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিলেন, তখনই এই মামলার সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।”
রাব্বি বলেন, “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পেরিয়েছে মাত্র একমাস। এই সময়ের মধ্যেই র্যাবের তৎপরতায় আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।
“এখন যে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের নাম অপর এক আসামির জবানবন্দিতে এসেছিল, কিন্তু তারা আগে গ্রেপ্তার হননি। আজকের পরিস্থিতিতে তদন্ত কার্যক্রম আবার শুরু করেছে।”
তিনি বলেন, “তদন্তকারী সংস্থা সঠিকভাবে এগোচ্ছে বলে মনে করি। আমরা চাই, এই হত্যাকাণ্ডে যারা যারা জড়িত সকলেই যেন আইনের আওতায় আসে। নিরীহ ও নিরাপরাধী কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়।”
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকাল ৪টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় ১৭ বছর বয়সী ত্বকী।
পরদিন তার ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়, যেখানে দেখা যায় ত্বকী পদার্থবিজ্ঞানে সর্বোচ্চ ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ পেয়েছিলেন।
৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর রফিউর রাব্বি বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
পরে ওই বছরের ১৮ মার্চ শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাত বিন ওসমানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে সম্পূরক অভিযোগ জমা দেন রফিউর রাব্বি।
পরে তার আবেদনে হাই কোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ২০ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলাটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করে।
ছিল ‘প্রচ্ছন্ন চাপ’
বর্তমানে ত্বকী হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে র্যাব-১১। সম্প্রতি মামলাটির অগ্রগতি নিয়ে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশার সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয়।
তিনি দাবি করেন, এক বছর কাজ করে ত্বকী হত্যা মামলার তদন্তের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছিল র্যাব। সরাসরি অফিসিয়াল নির্দেশনা না থাকলেও ‘প্রচ্ছন্ন চাপে’ ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত আর এগোনো সম্ভব হয়নি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর বলেন, “২০১৩ সালেই তৎকালীন অধিনায়কের অধীনে ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত মোটামুটি ক্লোজ করার পর্যায়ে চলে এসেছিল, তখনই ওই অফিসার বদলি হন। এই ব্রেকের পর তদন্ত কাজটা একেবারে থেমে যায়নি, কিন্তু গতিটা মন্থর হয়ে যায়।
“আমরা তদন্তে অনেকের নাম পেয়েছিলাম কিন্তু সবাইকে তখন খুঁজে পাইনি। গতবছর থেকে র্যাব হেডকোয়ার্টারের তদন্ত শাখা আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের ব্যাটেলিয়নের লিগ্যাল অফিসার তদন্ত শাখার প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন, গাইডলাইন নিয়ে এসেছেন। এ মামলার তদন্ত কাজ শেষ করার জন্য একটি কমিটিও করা হয়েছে।”
কাদের চাপ ছিল জানতে চাইলে র্যাব কর্মকর্তা তানভীর বলেন, “তদন্ত বন্ধ করে রাখা বা কাউকে ধরা যাবে না– এমন অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনা আমাদের ওপর ছিল না। কিন্তু একটা প্রচ্ছন্ন একটা চাপ তো কাজ করেছেই। শতভাগ দিয়ে আমরা কাজ করতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা অবশ্যই।
“কেননা আমাদের কাজ করার আরও অনেক সুযোগ ছিল। আমি যদি বলি, কেউ আমাকে নিষেধ করেছে সেটা ভুল বলা হবে, কিন্তু সময়টা তখন সঠিক ছিল না। বরং একটা নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য এখনকার সময়টা বেটার।”
তিনি বলেন, “আমাদের ইনটেনশন কখনোই খারাপ ছিল না। রাদার উই হ্যাড ডেফিনিট অনেস্ট ইনটেনশন ফ্রম দ্য বিগিনিং। আমরা চাইলে খুব সহজভাবে কারও ইচ্ছা অনুযায়ী তদন্ত করতে পারতাম, সেইটা আমরা করিনি।
“বিষয়টা আজ থেকে ৫ থেকে ৭ বছর আগেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু তাতে বাদী বা সাধারণ মানুষ খুশি হত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে “
একটি ‘নিরপেক্ষ তদন্ত রিপোর্ট’ দেওয়ার ‘নিশ্চয়তা’ দিয়ে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, “এক্ষেত্রে নতুন কেউ (আসামির তালিকায়) যুক্ত হবেন কিনা তা তদন্ত শেষ করলেই জানতে পারবেন। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল গিল্টি কেউ যেন বাদ না পড়ে।
“আবার বিষয়টা এমনও হবে না যে, পলিটিক্যালি এখন কেউ বিপদজনক অবস্থানে আছে তার নাম অযথাই আমরা অ্যাড করে দেব। আগেও ইনটেনশন অনেস্ট ছিল, এখনও অনেস্টই রয়েছে।”
জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্যে ৪ গ্রেপ্তার
দীর্ঘ সময় পর ত্বকী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৮ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে শাফায়েত হোসেন শিপন, মামুন মিয়া, কাজল হাওলাদার ও জামশেদ শেখ নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এর আগে ত্বকী হত্যার কয়েক মাসের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইউসুফ হোসেন লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর, তায়েবউদ্দিন জ্যাকি, রিফাত বিন ওসমান ও সালেহ রহমান সীমান্ত। তবে সবাই পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই বছরের জুলাই এবং নভেম্বর মাসে যথাক্রমে লিটন এবং ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনা থেকে হত্যা পর্যন্ত সব ঘটনার বিবরণ দিয়েছিলেন।
ভ্রমরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দেওয়া তথ্য ও পূর্ববর্তী তদন্তের সূত্র ধরে শিপন, মামুন, কাজল ও জামশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর জানান।
গ্রেপ্তারের পর চারজনকেই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব।
এ মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আজমেরী ওসমানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি এলেও তাকে কখনও আইনের আওতায় আনা হয়নি। বরং এই দীর্ঘ সময়ে শহরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন আজমেরী ওসমান।
ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বির অভিযোগ, শামীম ওসমানের নির্দেশে তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও তাদের সহযোগীরা মিলে ত্বকীকে অপহরণের পর নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওসমান পরিবারের সদস্যরা সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, তারা দেশ ছেড়ে পালাতেও সক্ষম হয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না কেউ।
র্যাব কর্মকর্তা তানভীর বলেন, “আসামি পলাতক থাকলেও বিচার কিন্তু চলতে থাকবে। তদন্ত করে আমরা একটা রিপোর্ট দেব, বাকিটা আদালতে নির্ধারণ হবে। সেক্ষেত্রে বাদী, বিবাদী উভয়ের আপত্তি জানানোর সুযোগ আছে। এমনকি বিচারকাজ চলাকালে নতুন কারো নামও আসতে পারে।”
তিনমাসের মধ্যেই ‘শক্ত অভিযোগপত্র’
এ মামলার জন্য একটি ‘শক্ত অভিযোগপত্র’ জমা দেওয়ার অভিপ্রায়ের কথা জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর বলেন, “তদন্তটা ভালোভাবে করতে গেলে কিছু সময় আমাদের দিতে হবে। আরও কিছু আসামির অ্যারেস্ট হবার প্রয়োজন আছে। (তদন্ত) রিপোর্ট সাবমিট করার পর তদন্ত অফিসারকে কিন্তু কোর্টে এটা ডিফেন্ড করতে হবে।
“জাহাঙ্গীর স্যার (তৎকালীন অধিনায়ক) একটা বেজলাইন দাঁড় করিয়ে গিয়েছিলেন। সেই তথ্যগুলো আমাদের কাছে আছে, নতুন করে ফাইন্ডিংস পাওয়াটা কঠিন। কিন্তু ওইগুলোর উপর ভিত্তি করে এবং ওই সময় যাদের নাম এসেছিল- তাদের ব্যাপারে আরেকটু তদন্ত করে রিপোর্টটা আমাদের শক্ত করতে হবে।”
তিন মাসের মধ্যেই অভিযোগপত্র দেওয়ার চেষ্টা করবেন জানিয়ে তিনি বলেন. “আমরা আর দেরি করতে চাই না। ৩ মাস সময়টাও অনেক মনে হতে পারে। কিন্তু অ্যাজ শর্ট অ্যাজ পসিবল টাইমে আমরা এটা শেষ করব।”
যা ছিল ফাঁস হওয়া র্যাবের তদন্ত প্রতিবেদনে
২০১৪ সালের মার্চে ত্বকীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর কয়েক দিন আগে ছেলে হত্যার বিচার নিয়ে আশান্বিত হয়েছিলেন শোকাহত বাবা-মা। যখন র্যাব দাবি করেছিল, তারা হত্যার রহস্য ভেদ করেছে এবং এমনকি একটি খসড়া তদন্ত প্রতিবেদনও তৈরি করেছে।
ত্বকীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর একদিন আগে, র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান গণমাধ্যমে বলেছিলেন, তাদের কাছে ১১ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে এবং এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র যে কোনো দিন আদালতে জমা দেওয়া হবে।
এমনকি হত্যাকাণ্ডে আজমেরী ওসমানসহ ১১ জনের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে র্যাবের করা খসড়া তদন্ত প্রতিবেদনও সে সময় গণমাধ্যমে ফাঁস হয়।
ফাঁস হওয়া তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল পরিকল্পনা নয়, ত্বকী হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন আজমেরী ওসমান।
তার নির্দেশে, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ তার সহযোগীরা ত্বকীকে অনুসরণ করে এবং তাকে অপহরণ করে শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে উইনার ফ্যাশনে তার 'টর্চার সেলে' নিয়ে যায়।
পরে ওই রাতে, আজমেরী এবং তার সহযোগীরা ত্বকীকে পিটিয়ে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর তার লাশ বস্তায় ভরে আজমেরীর গাড়িতে করে চারারগোপ এলাকায় নিয়ে যায়।
সেখান থেকে রাত একটা থেকে দেড়টার মধ্যে ঘাতকরা নৌকায় করে লাশ নিয়ে কুমুদিনী জোড়া খাল এলাকার শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়। পরদিন ৮ মার্চ নদী থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করা হয় বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।
র্যাবের সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে রফিউর রাব্বি তার সমর্থকদের নিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে প্রচার চালান। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারেন শামীম ওসমান।
২০১৩ সালের ৭ অগাস্ট আজমেরীর 'উইনার ফ্যাশন' অফিসে অভিযান চালিয়ে রক্তমাখা জিন্স, একটি পিস্তলের বাট এবং ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম জব্দ করে র্যাব। ওই সময় র্যাব কর্মকর্তারা দেয়াল, সোফা ও আলমারিতে বেশকিছু গুলির চিহ্নও দেখতে পান।
ফাঁস হওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ত্বকী হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১১ জন প্রত্যেকের ভূমিকার কথা সবিস্তারে লেখা হয়।
আজমেরী ছাড়া অন্যরা হলেন, ইউসুফ হোসেন লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর, তায়েবউদ্দিন জ্যাকি, রাজীব, কালাম শিকদার, মামুন, অপু, কাজল, শিপন ও জামশেদ হোসেন।
র্যাব লিটন, ভ্রমর, জ্যাকি এবং সন্দেহভাজন হিসেবে রিফাত বিন ওসমান ও সালেহ রহমান সীমান্তকে গ্রেপ্তারও করে। এদের মধ্যে লিটন ও ভ্রমর ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
যদিও পরবর্তীতে ভ্রমর আদালতে জবানবন্দিতে তার দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিলেন।
ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে সাড়ে ১১ বছর ধরে আন্দোলন চলছে। প্রতিমাসের ৮ তারিখ নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, “এই মামলার বিচার শেখ হাসিনা যে আটকে রেখেছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় সরকার পতনের মাত্র একমাসের মধ্যে চারজনের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টির মধ্য দিয়ে।”তিনি বলেন, “আমরা ত্বকীর লাশ ছুঁয়ে শপথ করেছিলাম, এই বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। আমরা কখনোই ত্বকী হত্যার বিচারের আশা ছাড়িনি, এই বিচার হবেই এবং দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবেন।”