পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে সজীব পড়াশোনার ফাঁকে আট হাজার টাকা বেতনে এক দোকানে চাকরি করতেন, পাশাপাশি রাতে থাকতেন।
Published : 31 Jan 2024, 11:24 AM
সবজি বিক্রি করে সংসারের ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খেতে হয়। অনটনের মধ্যে পড়াশুনার খরচ চালিয়ে নিতে ছেলে চাকরি নিয়েছিল দোকানে। রাতে সেই দোকানেই ঘুমিয়ে বাঁচাত থাকার খরচটুকুও। তবে এ সুযোগই একমাত্র সন্তানের জীবনের কাল হয়ে আসবে তা কল্পনাও করেননি কালাম জমাদ্দার।
বরিশাল সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে কালাম জমাদ্দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছেলে সজীব পড়াশুনা করলেও তার খরচ নিজেই বহন করত। মাঝে মধ্যে টাকা চাইত, সাধ্য অনুযায়ী দিতাম। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আগুনে আমার সব কিছু পুড়ে গেছে।”
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নাঙ্গলিয়া গ্রামের বাসিন্দা কালাম জমাদ্দারের ছেলে সজীব জমাদ্দার (২০) বরিশাল নগরীর বেসরকারি ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে পড়াশোনার ফাঁকে সিএন্ডবি রোডের হাবিব মটরসে আট হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন, পাশাপাশি রাতে দোকানে থাকতেন।
মঙ্গলবার ভোরে নগরীর নথুল্লাবাদ জিয়া সড়কের বিপরীতে সেই দোকানসহ চারটি দোকানে আগুন লাগে। এতে দগ্ধ হয়ে মারা যান সজীব।
সজিবের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। খবর পেয়ে হাসপাতালের মর্গে ছুটে আসেন শিক্ষক ও সহপাঠীরা।
ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নুরুল হুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছেলেটি অত্যন্ত ভদ্র ও অমায়িক ছিল। পড়াশুনায় মনযোগী ছিল। অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে সে ছিল আলাদা। তাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত।”
সজীবের সহপাঠী সৌরভ মিস্ত্রি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভাব-অনটনের মধ্যে মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করতে পারেনি সজীব। কিন্তু সে মেধাবী ছিল। তাই কারিগরি শিক্ষায় পড়াশুনা করে সংসারের হাল ধরার তাগিদ ছিল তার মধ্যে।”
সদর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রবিউল আল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জিয়া সড়কের বিপরীতে এক সারিতে দু’টি ফার্নিচারের, একটি মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ বিক্রয়ের ও একটি গ্যারেজ আছে। মঙ্গলবার ভোর রাত ৩টার দিকে ওই দোকানগুলোয় আগুন লাগার খবর পান তারা।
পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট পৌনে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সম্পর্কে স্টেশন অফিসার রবিউল বলেন, সঠিক কারণ তদন্ত না করে বলা যাবে না। তবে ধারণা করছি বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়েছে। ফার্নিচারের দোকানে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সেভাবে এখানেও ছড়িয়ে পড়েছে।
“মারা যাওয়া কর্মচারী কীভাবে মারা গেল, সেটিও তদন্ত না করে বলা যাবে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে অগ্নিকাণ্ডের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনি পুড়ে গেছে।
লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা কোতয়ালী মডেল থানার এসআই আল মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মরদেহটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ময়নাতদন্তের পর তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক নুরুল হুদা জানান, মাগরিবের নামাজের পর জানাজা শেষে সজীবের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
পুরানো খবর