অভিযোগপত্রে নারাজি আবেদনের ওপর শুনানি হয়েছে; আগামী বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি আদেশের দিন ধার্য আছে।
Published : 05 Nov 2022, 09:46 PM
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন সাঁওতাল নিহতের বিচার ছয় বছরেও শুরু হয়নি।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লি মাদারপুর ও জয়পুর গ্রামে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় সংঘর্ষের সময় তিনজন সাঁওতাল গুলিতে মারা যান।
দিনটি পালন উপলক্ষে শনিবার ও রোববার দুই দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সাঁওতালরা।
শনিবার গাইবান্ধা শহরে শোক শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করেছেন সাঁওতালরা। সকালে গাইবান্ধা শহরের গানাসাস মার্কেটের সামনে সমাবেশের শুরুতেই নিহত মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
রোববারের কর্মসূচিতে রয়েছে সকালে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লিতে নিহত সাঁওতালদের অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ ও মোমবাতি প্রজ্জ্বালন; পরে শোক মিছিল এবং গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের গোবিন্দগঞ্জের কাটামোড় এলাকায় সমাবেশ।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে নয়জন পুলিশ সদস্য তীরবিদ্ধ ও চারজন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন সাঁওতাল শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ মারা যান।
গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের আওতাধীন সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে এ সংর্ঘষ হয়। ঘটনার দিন পুলিশ চিনিকলের জমিতে গড়ে তোলা বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে।
এ ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করেন। একই ঘটনায় দশদিন পর ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমব্রম বাদী হয়ে চিনিকলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপজেলার সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০-৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করেন।
মামলায় এখনও অভিযোগ গঠন হয়নি
এই দুইটি মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত করে। ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) গাইবান্ধা ইউনিটের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই গোবিন্দগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে ১১ জন আসামির নাম বাদ দিয়ে ৯০ জনকে আসামি করা হয়।
একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর মামলার বাদী থোমাস হেমব্রম অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক পার্থ ভদ্র অধিকতর তদন্ত করতে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন।
সিআইডি ২০২০ সালের ২ নভেম্বর আদালতে একই ধরনের অভিযোগপত্র দাখিল করে। তারপর বাদী থোমাস হেমব্রম ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি পুনরায় একই আদালতে নারাজি আবেদন করেন। এই নারাজির উপর ওই সালের ১২ সেপ্টেম্বর শুনানি করে আদালত। এরপর কয়েক দফায় নারাজির উপর শুনানি হয়।
সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ অক্টোবর শুনানির উপর আদেশ হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু সেদিন আদালত কোনো আদেশ দেয়নি। আদালত আগামী বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি আদেশে জন্য দিন ধার্য করেছে।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, পিবিআই ও সিআইডি উভয় কর্তৃপক্ষ মূল আসামিসহ ১১ জনকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। ফলে সাঁওতালরা চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকে বলেন, ঘটনার ছয় বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। মামলার উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওই ঘটনায় অনেকে পঙ্গু হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এই ঘটনার পর সরকারের নানা আশ্বাসের ‘কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উল্টো আমাদের বাপ-দাদার জমিতে ইপিজেড নির্মাণ করে সাঁওতালদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে।”