“আমরা লক্ষ্য করেছি, অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দালালদের মাধ্যমে আসা আবেদনগুলোতে একটি বিশেষ সাইন বা সিল রয়েছে।”
Published : 24 Apr 2025, 06:37 PM
পাবনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালাল ও অফিসের কর্মকর্তা- কর্মচারীর যোগসাজশে গ্রাহকদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক।
বৃহস্পতিবার পাবনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অভিযানের পর এ কথা জানিয়েছেন পাবনা-সিরাজগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধর।
তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দালালদের মাধ্যমে আসা আবেদনগুলোতে একটি বিশেষ সাইন বা সিল রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই সাইন থাকলে সেই ফাইলটি সাথে সাথে অনুমোদন পায়।
“এই সাইনের বিষয়ে অফিসের সহকারী পরিচালকে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।”
বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে দুদক এ অভিযান শুরু করে জানিয়ে তিনি বলেন, এ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও জিম্মি করে গ্রাহকদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
“অভিযানের শুরুতেই আমরা বিভিন্ন গ্রাহকের সাথে কথা বলেছি। তারাও নানা ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন এবং এসব বেশকিছু অভিযোগের সত্যতাও রয়েছে।”
তিনি বলেন, “অভিযানে অফিসের কম্পিউটার অপারেটর আমিনুলের বিরুদ্ধে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিয়ে পাসপোর্ট করে দেবার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে।”
অভিযান চলাকালে পাসপোর্ট অফিসের নানা অনিয়ম ও ভোগান্তির বিষয়ে জানতে উপস্থিত কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয়।
গ্রাহক শাহিনুর রহমান জানান, পাসপোর্ট অফিসে দালাল ধরা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। দালাল ছাড়া আসলে দিনের পরদিন ঘুরতে হয়। দালাল ধরলেই সব সহজ।
“কম্পিউটার অপারেটর আমিনুল আমার একটি পাসপোর্ট করার জন্য বিকাশে ২৪০০ টাকা নিয়েছে। টাকা দেবার আগে দিনের পর দিন ঘুরিয়েছে। বিকাশ লেনদেনের তথ্য আমি দুদককে দিয়েছি।”
ঈশ্বরদী থেকে আসা তৌফিক জানান, “সেই ঈশ্বরদী থেকে এসে বার বার ঘুরতে হয়। এর আগে আমি সকাল ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বসে থেকেও সংশোধনের কাজ হয়নি। অথচ ২টার পর কয়েকজন এসে কাজ করে নিয়ে চলে গেল। কারণ তারা দালাল ধরেছে।
“আমি দালাল ধরিনি এ জন্য একটার পর একটা সমস্যা দেখিয়ে ঘুরিয়েছে। এখন আপনাদের (দুদক ও সাংবাদিক) দেখে কাজ করে দিল।”
সদর উপজেলার হাজিরহাট এলাকার গাফফার হোসেন, “ছবি ওঠানোর পর ১৪ দিন ধরে আমাকে বিভিন্নভাবে ঘুরাচ্ছে। একেকদিন একেক সমস্যা দেখিয়ে ঘুরানো হয়। এটি সর্বোচ্চ ৩ দিনের কাজ। অথচ আমাকে এতোদিন ঘুরানো হয়েছে। কারণ আমি দালাল ধরিনি। যারা ধরেছে তাদের এতো ঘুরতে হয়নি।”
দুদকের সহকারী পরিচালক সাধন বলেন, “আমাদের অভিযান শেষ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হবে এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”