বিকালে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পৈত্রিক বাড়ি ভাঙার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
Published : 06 Feb 2025, 03:23 PM
নারায়ণগঞ্জ শহরের আদালতপাড়ায় থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে দিয়েছে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নির্মাণ শ্রমিকদের ডেকে হাতুড়ি-শাবল দিয়ে এসব ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়। ভাঙার সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদেরও হাত লাগাতে দেখা যায়।
এ সময় জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় প্রাঙ্গণে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কয়েকটি ম্যুরাল ও স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যটিও ভাঙা হয়েছে।
আইনজীবীদের নেতৃত্ব দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্যসচিব অ্যাডভোটেক আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
এ সময় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, “(শেখ মুজিবের) এইসব ছবি দিয়ে আওয়ামী লীগ পবিত্র বিচারাঙ্গণকে কলুষিত করেছে। এই ম্যুরালের দোহাই দিয়ে প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছিল। বাংলাদেশে বিপ্লব সাধিত হয়েছে এবং এখন দেশে নিরপেক্ষ সরকার।
“সুতরাং এখন প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন প্রশাসন ও বিচারবিভাগকে কলঙ্কিত কাউকে করতে না পারে সেজন্য নারায়ণগঞ্জের সাধারণ আইনজীবীরা এইসব ছবি অপসারণ করেছে। আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত নারায়ণগঞ্জ চাই।”
বুধবার রাতে রাজধানী ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন গুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর রাতভর দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসভবন ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙা হয়।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। পরে তারা নির্মাণ শ্রমিকদের খবর দেন।
বেলা ১২টার দিকে বড় আকারের হাতুড়ি, শাবল নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকরা পৌঁছালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভাঙা শুরু করেন আইনজীবীরা। বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হেসেন খান ও আবু আল ইউসুফ টিপু নিজেও শাবল ও হাতুড়ি দিয়ে ম্যুরাল ভাঙা কার্যক্রমে অংশ নেন।
এ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আবক্ষ ভাস্কর্যটিও ভাঙা হয়।
পরে পাশে জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনের দুটি ম্যুরালও একইভাবে ভাঙা হয়। যদিও এ ম্যুরালগুলো ৫ অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল।
ভাঙচুরের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরকার হুমায়ূন কবির, আইনজীবী সমিতি ও সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আনোয়ার প্রধান, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া, মহানগর বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদসহ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা।
জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জাকিরকেও সেখানে দেখা গেছে।
এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নীচতলার ‘বঙ্গবন্ধু কর্নারেও’ ভাঙচুর চলে। সেখানে থাকা ছবি ও ফটোফ্রেম ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুরের এক পর্যায়ে ভাঙা কাঁচে আঘাতও পান আবু আল ইউসুফ টিপু।
ভাঙচুর চলাকালীন পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসেনি।
আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, “গতকাল দেখেছেন শেখ মুজিবের ৩২ নম্বরের বাড়ি ভেঙেছে জনগণ। আমরা তারই ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল বা ছবি ভেঙে দিচ্ছি। এটি নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। যেখানে যেখানে আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবের ছবি বা স্মৃতিচিহ্ন আছে সবগুলো ভেঙে ফেলা হবে।”
বিকালে শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পৈত্রিক বাড়ি বায়তুল আমান ভাঙার কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির এ নেতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “আমি একটি প্রোগ্রামে সকালেই আড়াইহাজারের উদ্দেশে বের হয়ে যাই। ঘটনার সময় আমি সেখানেই ছিলাম। বিষয়টি সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অবগত নই। এ সম্পর্কে খোঁজখবর করার পর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”