২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজ পাড়ার বাসার কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়।
Published : 19 Jan 2025, 10:41 PM
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বিচার এক যুগেও শেষ হয়নি। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলাটি এখন যুক্তি-তর্কের অপেক্ষোয় রয়েছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফারুক আহমেদের ছেলে আহমদ সুমন মজিদ। আর এ ক্ষোভ নিয়েই শনিবার পারিবারিকভাবে পালিত হয়েছে ফারুক আহমেদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী।
ফারুক আহমেদের ছেলের অভিযোগ, সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ এলেই কারাগারে থাকা কোনো আসামি অসুস্থ, তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য দিতে না আসাসহ বিভিন্ন কারণে বার বার পিছিয়ে গেছে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার বিচার কাজ।
তিনি দ্রুত এই মামলার বিচার নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন। মামলাটি টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
২০১৪ সালে এই মামলায় জড়িত থাকা সন্দেহে আনিছুল ইসলাম ওরফে রাজা এবং মোহাম্মদ আলী নামের দুজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যা মামলার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাঁকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি ছানিয়াত খান ওরফে বাপ্পা জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে।
তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরমধ্য দিয়েই বিচার কাজ শুরু হয়।
এই মামলার আসামি আমানুর রহমান খান আত্মসর্মপণের পর তিন বছর কারাগারে ছিলেন। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। গত বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
তার অপর ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান ফারুক হত্যা মামলায় জামিন পেলেও এখন অন্য মামলায় কারাগারে আছেন। অন্য দুই ভাই জাহিদুর, সানিয়াত এবং আসামি মোহাম্মদ কবির পলাতক রয়েছেন। দুই আসামি আনিছুর রহমান রাজা ও মোহাম্মদ সমির কারাগারে মারা গেছেন। জামিনে রয়েছেন মোহাম্মদ আলী, মাসুদুর রহমান, নাছির উদ্দিন নুরু, ফরিদ আহমেদ, ছানোয়ার হোসেন ও বাবু।
নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমদ সুমন মজিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে। বিচারের আশায় অপেক্ষা করতে করতে এই মামলার বাদী আমার মা ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর মারা গেছেন। মামলার আসামিরা প্রভাবশালী। তারা নানাভাবে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন।”
এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন টাঙ্গাইলের সাবেক অতিরিক্ত সরকারি কৌসুলি মনিরুল ইসলাম খান। তিনি জানান, গত ১১ নভেম্বর এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এই মামলার ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন মামলাটির যুক্তি-তর্ক হবে। তারপরেই রায় হবে।
শনিবার ফারুক আহমেদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে তার কবরে পরিবারের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে দুপুরে তার কলেজ পাড়ার বাসভনে দোয়া ও দুঃস্থদের ভোজের আয়োজন করা হয়।