“আমরা পকেটে হাত দিয়ে যদি ঘুমিয়ে থাকি তাহলে আমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে। এটারই প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন।”
Published : 25 Jul 2024, 06:53 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে চলা ভাঙচুর ও লুটপাট প্রতিহত করতে না পারায় রংপুর আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, “আপনারা তো ফেল। অথচ ঢাকায় আমার ছাত্রলীগের অন্তত ৮-১০ জন শাহাদতবরণ করেছে; আওয়ামী লীগের শাহাদতবরণ করেছে।”
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছিলেন মন্ত্রী।
কোটা আন্দোলন হঠাৎ সহিংস হয়ে পড়ার পর ঢাকার পরিস্থিতি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “দুষ্কৃতকারীরা ছাত্র আন্দোলন থেকে গণভবন আক্রমণ করেছিল। বঙ্গভবনের চতুর্দিকে ঘেরাও করেছিল। সচিবালয়ে আক্রমণ করেছিল। সেখানে কত ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেগুলো জানা উচিত।”
রংপুরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার পর কেন প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়নি- সে প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, “আপনাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আপনারা কীভাবে ভুলে গেলেন আমরা বীরের জাতি, দেশ স্বাধীন করেছি?
“আমাদের হাতে অস্ত্র ছিল না, শুধু ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা পকেটে হাত দিয়ে যদি ঘুমিয়ে থাকি তাহলে আমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে। এটারই প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন।”
সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে হামলার ঘটনায় কাউকে ছাড় না দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেছেন, নাশকতাকারী সবাইকেই চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
ঢাকায় তাণ্ডবের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ভাঙচুরের আন্দোলন শুরু করে দিল। রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করার আন্দোলন শুরু করে দিল। সেতু ভবন পুড়িয়ে দিল।
“সেতু ভবনের সঙ্গে কোটা আন্দোলনের কী সম্পর্ক, এটা আমার জিজ্ঞাসা। ত্রাণ অধিদপ্তরও পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের সংস্কৃতির ধারক-বাহক বিটিভি। স্বাধীনতা আন্দোলনসহ আমাদের গৌরবোজ্জ্বল সব কিছু বিটিভির তথ্য ভাণ্ডারে, আর্কাইভে ছিল। পরিকল্পিতভাবে বিটিভি ভবনে আগুন দিয়ে আর্কাইভগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। যেখানে আলবদর-রাজাকারদের দুষ্কর্মের ইতিহাস ছিল। যা মাঝে মাঝে প্রদর্শিত হত, তারা সেটাই টার্গেট করেছে।”
পুলিশের ওপর হামলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নরসিংদীতে জেলা কারাগার ভেঙে ফেলল। সেখান থেকে ৯ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হল।
রংপুরে তাজহাট থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ডিবির কার্যালয়ে আক্রমণ করা হল। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানা, উত্তরা থানা, মোহাম্মদপুর থানায় আক্রমণ করেছে। এভাবে একের পর এক থানায় হামলা হয়েছে।
“চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের ছেলেদের ভবনের ছাদ থেকে পিটিয়ে পিটিয়ে ফেলে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।”
দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যদি তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে পারি, তাহলেই এ দেশ শান্ত হবে এবং আমরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারব।”
জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য টিপু মুনশি, নাছিমা জামান ববি, মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান।
সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক স্বপন, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন।
সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান বাবলু, জাকির হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রংপুর সফরে যা যা হল
দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে চলা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা পরিদর্শনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর সফরে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
রংপুরে নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা পরিদর্শন করতে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি। দুপুর ১২টার দিকে সিইওবাজার এলাকায় বিজিবি সদর দপ্তরে হেলিকপ্টারে করে পৌঁছেন তারা।
সার্কিট হাউজে গার্ড অব অনারের পর দুর্বৃত্তদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত তাজহাট থানা, ডিবি কার্যালয়, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি, আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি।
পরে বগুড়ায় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে তাদের।