সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা বন্ধে হুমকির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
Published : 19 Nov 2024, 11:50 AM
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার একটি গ্রামে মরমি সাধক লালন সাঁই স্মরণে ‘মহতি সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা’র আয়োজন করেছে ভক্তরা। তবে, ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয়ে ধর্মীয় প্রসঙ্গ টেনে এই আয়োজন বন্ধের হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন।
এতে মেলা নিয়ে চরম আতঙ্কে আছেন আয়োজকরা। আয়োজকদের অভিযোগ, গত শুক্রবার হামলার প্রস্তুতিও নিয়েছিল ওই ব্যক্তিরা, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে তারা পিছিয়ে যায়।
আগামী শুক্রবার থেকে উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে ‘মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি’ প্রাঙ্গণে দুইদিনের এই আয়োজন শুরু হবে।
মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল বলেন, “এক দশক আগে আমার জমিতে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করি। সাত বছর ধরে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করছি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লালন ভক্তরা এই আয়োজনে আসেন এবং লালনের গান চর্চা করেন।”
তিনি বলেন, “আমরা তো কারও বিরুদ্ধে কোনো কথা বলি না। আমরা আমাদের মতো করে সাঁইজির গান চর্চা করি, ভক্তদের মাঝে খাবার বিতরণ করি।”
এবার আয়োজন নিয়ে আতঙ্কে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আগের কোনো বছর এমনটা হয় নাই। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও বাধা আসে নাই। এইবার কয়েকজন তৌহিদী জনতা আমাদের এই আয়োজন বন্ধ করতে হুমকি দিচ্ছে। বন্ধ না করলে সবকিছু ভেঙে ফেলবে, এমন হুঁশিয়ারি দিচ্ছে।”
তাই প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন এই লালনভক্ত।
এর আগে শুক্রবার এই লালন মেলাকে ‘ঈমান বিধ্বংসী’ উল্লেখ করে তা বন্ধের দাবিতে ‘কাশীপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করেন শতাধিক মানুষ।
পরে মুক্তিধাম আশ্রমের অদূরে স্থানীয় একটি ঈদগাহে জড়ো হন তারা ।সেখানে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল।
ওই জমায়েতের একটি ভিডিও চিত্রে মাওলানা আউয়ালকে ‘লালন মেলা’ বন্ধে হুমকি দিতে শোনা যায়।
আউয়াল বলেন, “অন্যায়কে প্রতিহত করতে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। আমাদের তৌহিদী জনতা নারায়ণগঞ্জে কম নাই। প্রয়োজনে তৌহিদী জনতা সকলকে নিয়ে আমরা সামনে বাড়বো, কী করে এটি (লালন মেলা) বন্ধ করা যায়, সেটি আমরা দেখবো।
“প্রাথমিক অবস্থায় আমরা আল্টিমেটাম হিসেবে বললাম। প্রশাসনকে বলবো, এখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “মুসলিম তৌহিদী জনতা আপস করতে রাজি না। রসুল বলেছেন, কোনো নাজায়েজ বা অশালীন কাজ দেখলে হাত দিয়ে বাধা দিতে। প্রয়োজনে আমরা হাত দিয়ে বাধা দিবো।
“প্রশাসনকে বলবো, যা কিছু এখানে হচ্ছে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন এটা না হয়। অপ্রীতিকর কিছু হলে তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।”
নাম না প্রতাশের শর্তে স্থানীয় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ওইদিন লোকজন জড়ো হইছিল আশ্রমে হামলা করার উদ্দেশ্যে। কয়েকটি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাই ঈদগাহে জড়ো হন। কিন্তু ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে যাওয়ায় তেমনটা আর হয়নি।
জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শরীফুল ইসলাম বলেন, “কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে না ঘটে সেজন্য আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। আমি আয়োজকদের বলেছি, তারা যেন প্রশাসনের কাছ থেকে যথাযথভাবে অনুমতি নিয়ে মেলার আয়োজন করেন।”
এদিকে, ফকির শাহ জালাল বলেন, “আমরা তো সকল আয়োজন করে ফেলেছি। অতিথিদেরও দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে। প্রতিবছর ডিসি আর এসপি সাহেবকে দাওয়াত কার্ডের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্পর্কে অবগত করি। এবারও তাই করবো। কিন্তু প্রতিক্ষণেই হামলার ভয় হচ্ছে।”
মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির এ প্রতিষ্ঠাতা সোমবার জেলা প্রশাসকের দেখা করেছেন। তার কাছে আয়োজনের অনুমতি চেয়ে লিখিতও দিয়েছেন বলে জানান।
জানতে চাইলে ডিসি মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, “হুজুরদের কয়েকজন মেলা বন্ধের দাবিতে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। অন্যদিকে মেলার আয়োজকদের কাছ থেকেও অনুমতি চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকে অবগত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে বিবেচনায় পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এবিষয়ে জানতে মাওলানা আব্দুল আউয়ালের কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি ‘ব্যস্ত থাকার’ কথা জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। পরবর্তীতে কল দিলে তিনি ধরেননি। মেসেজ পাঠানো হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা বন্ধে হুমকির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। সংগঠনটি লালন মেলার আয়োজন নির্বিঘ্নে করতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।