মিথ্যা ঘোষণায় মদ আনার অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
আগাম জামিনের আবেদন করে তিনি এবং তার ছেলে হাই কোর্টের সাড়া না পেলেও বৃহস্পতিবার হঠাৎ এলাকায় ফিরলে ফুলের মালা দিয়ে তাকে বরণ করে নিয়েছেন সমর্থকরা।
২৪ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় দুটি কন্টেইনারে ৩৬ হাজার ৮১৭ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধারের পর ওই চোরাচালানের ‘হোতা’ হিসেবে আজিজুলকে চিহ্নিত করে র্যাব।
তারপরই আজিজুল ও তার ছেলে মিজানুর রহমান আশিক দুবাই ‘পালিয়ে’ যান বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়। বিমানবন্দর থেকে আরেক ছেলে আব্দুল আহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন।
এ ঘটনার পর এলাকায় আজিজুলের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা আজিজুলের ‘মদকাণ্ডে’ বিব্রত হওয়ার কথা বলেন।
এর মধ্যেই আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আজিজুল এবং তার ছেলে আশিক হাই কোর্টে জামিন আবেদন করেন। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার তাদের চার সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
এরপর সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালায়, আজিজুল ও তার ছেলেকে হাই কোর্ট জামিন দিয়েছে, যদিও তা সঠিক নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজিজুল ইসলামের আইনজীবী মো. সালেকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "তারা আগাম জামিনের আবেদন করেন, আদালত শুনানি নিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে তাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে তাদেরকে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে গ্রেপ্তার না করা হয় সেই আদেশ দিয়েছে আদালত।"
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল ৪টার দিকে আজিজুল ইসলাম মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে থেকে শ্রীনগর হয়ে ষোলঘর ইউনিয়ন পরিষদে যান। গলায় ফুলের মালা পরে তিনি হুডখোলা গাড়িতে করে জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। গাড়ির পেছনে ছিল মোটরসাইকেলের বহর। কর্মী-সমর্থকরা এ সময় তার নামে স্লোগান দেন।
শ্রীনগর থেকে ষোলঘর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এসে বক্তব্য দেন আজিজুল। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে নিজের বাড়ি ‘মায়ের স্বপ্ন গোল্ডেন গার্ডেন’-এ যান। সেখানেও তিনি কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
মদকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আজিজুল বলেন, তিনি ওই মদের চালান আনেননি। তিনি ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার’ শিকার।
তাহলে বিদেশে পালিয়ে গেলেন কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, “ব্যবসায়িক কাজে দুবাই গিয়েছিলাম।”
গত ২৩ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আসা দুটি কভার্ডভ্যান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আটক করে র্যাব। এ সময় সেখান থেকে আজিজুল ইসলামের দুই কর্মচারীকে আটক করা হয়।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, “আজিজুলের চীনা বৈদ্যুতিক রিক্শা আমদানির ব্যবসা এবং তার ছেলেদের ইলেকট্রনিক্স আমদানির ব্যবসা রয়েছে বলে গ্রেপ্তার হওয়া আজিজুলের ছেলে আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন।”
মুন্সীগঞ্জের পর ঢাকার ওয়ারিতে আজিজুলের ১২ তলা ভবনেও তল্লাশি চালায় র্যাব। সেখানে ৯৮ লাখ বাংলাদেশি টাকাসহ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়ার কথাও জানানো হয়।
স্থানীয়রা জানায়, কৃষক পরিবারের সন্তান আজিজুল ঢাকার বংশালের একটি রিকশা পার্টসের দোকানে চাকরি করতেন। এরপর নিজে দোকান দিয়ে শুরু করেন একই ব্যবসা। সেখান থেকেই তার উত্থান।
ঘটনার পর আজিজুলের স্ত্রী মায়া ইসলামসহ আরেক ছেলে তাদের নতুন বাড়ি ‘মায়ের স্বপ্ন গোল্ডেন গার্ডেন’ ছেড়ে যান।
এলাকায় আলিশান বাড়ি, প্রচুর জমি, গুদামের পাশপাশি ঢাকার ওয়ারিতে বাড়ি ছাড়াও বংশালে আজিজুলের গুদাম রয়েছে বলে জানায় র্যাব।
আরও পড়ুন: