‘মদের কারবারি’ আজিজুলের ভাড়াটিয়ার মৃত্যু নিয়েও ধোঁয়াশা

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল মদ চোরাচালানের এক চক্রের ‘হোতা’ বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকমুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2022, 06:54 PM
Updated : 24 July 2022, 06:54 PM

সাঁইত্রিশ হাজার বোতল মদ চোরাচালানের হোতা হিসেবে নাম ওঠার পর পালিয়েছেন আজিজুল ইসলাম, এখন মুন্সীগঞ্জে তার এক ভাড়াটিয়ার মৃত্যু নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের ষোলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা।

শনিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় দুই কন্টেইনার ভর্তি ৩৬ হাজার ৮১৭ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করে র‌্যাব। এটা র‌্যাবের ইতিহাসে মদের সবচেয়ে বড় চালান আটকের ঘটনা।

পোশাক কারখানার পণ্য আমদানির মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এসব মদ আমদানি করা হচ্ছিল। এই মদ আমদানি চক্রের ‘হোতা’ হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান আজিজকে চিহ্নিত করেছে র‌্যাব।

মদ আটকের আগের দিন শুক্রবার আজিজুলের ভাড়াটিয়া ফারুক হোসেনের (৪০) অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। চেয়ারম্যানের বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন তিনি।

এই ঘটনায় ফারুকের বড় ভাই শাহজাহান মুন্সীগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।

শাহজাহান বলেন, শুক্রবার রাত ২টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে ফারুকের মৃত্যু হয়। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। কীভাবে মৃত্যু হল বা মৃত্যুর কারণ তাদের কাছে স্পষ্ট নয়।

এখন চেয়ারম্যানের মদের চোরাচালানের খবর শোনার পর ফারুকের আত্মীয়-স্বজনেরা নানা সন্দেহ করছেন।

ফারুক সেলামতি গ্রামের আব্দুল মান্নান শেখের ছেলে। যেদিন মৃত্যু হয়েছিল, সেদিন তিনি একাই বাসায় ছিলেন।

ফারুকের মৃত্যু নিয়ে জানতে চাইলে শ্রীনগর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফারুকের লাশ আমরা উদ্ধার করি হাসপাতাল থেকে। তার লোকজন আমাদের জানালো ফারুক ডিশলাইনের কাজ করে, কিন্তু নেশাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। এসব নানা কারণে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে যাওয়ার হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন।

“তবে ফারুকের লোকজন পোস্টমর্টেমের জন্য কিছুতেই লাশ পুলিশকে দিতে রাজি হচ্ছিল না। তারা পারলে পুলিশের কাছ থেকে লাশ কেড়ে নিয়ে যায়, এমন অবস্থা। এক পর্যায়ে জোর করে লাশ হেফাজতে নিয়ে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠায় পুলিশ।”

ফারুকের লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনও হাতে পায়নি পুলিশ। তা পেলে মৃত্যুর কারণ বোঝা যাবে বলে তার অপেক্ষায় আছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

Also Read: স্ক্যানিং ছাড়াই বন্দর থেকে খালাস হয় মদভর্তি কন্টেইনার: র‌্যাব

র‌্যাবের বক্তব্য অনুযায়ী, আজিজুল এবং তার দুই ছেলে মিজানুর রহমান আশিক ও আব্দুল আহাদও বাবার সঙ্গে মদ পাচার চক্রে জড়িত।

আজিজুল ও তার বড় ছেলে আশিক শনিবার ভোরেই দুবাই পালিয়েছেন। ছোট ছেলে আহাদকে রোববার সকালে বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দুবাই বসে নাসিরউদ্দীন নামে এক ব্যক্তি এই মদ পাঠিয়েছেন বলে র‌্যাব জানিয়েছে। তার বাড়িও মুন্সীগঞ্জে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে আজিজুলের ওয়্যারহাউজে এই মদগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। মদ আটকের পর ওয়্যারহাউজ ও বাড়িতে গিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

খবর নিয়ে ঢাকার ওয়ারীতে আজিজুলের ১২তলা ভবনে গিয়েও তাদের পায়নি র‌্যাব। তবে ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে ৯৮ লাখ টাকা, ৪ হাজার ইউরো, ১১ হাজার ইউয়ানসহ কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয়, নেপালি, সিঙ্গাপুরী ও মালয়েশীয় মুদ্রা।

আজিজুল দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ কাজে জড়িত বলে ধারণা র‌্যাব কর্মকর্তাদের।

তবে শ্রীনগর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, আজিজুল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আগের কোনো মামলা বা অভিযোগ তিনি খুঁজে পাননি।

[এই প্রতিবদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি]