“অনেকে ক্লাসে জুতা পরে আসেনি। তাই স্যার ক্লাসে ঢুকে তাদের বেত দিয়ে পেটান।”
Published : 25 Feb 2025, 11:14 AM
গোপালগঞ্জে স্কুলে জুতা না পরে আসায় শিক্ষকের বেত্রঘাতে তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়নের জলিরপাড় ‘জেকেএমবি মল্লিক উচ্চ বিদ্যালয়ে’ রোববার এ ঘটনা ঘটে। ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক স্বপন মণ্ডলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের গণ বেত্রাঘাতের এ অভিযোগ উঠেছে।
আহতদের মধ্যে ৭ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। বাকি দুজনের মধ্যে একজন ৭ম শ্রেণির ও আরেক জন ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
জেকেএমবি মল্লিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল ড্রেস ও জুতা পরে স্কুলে আসার নির্দেশ দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রথম ৭ দিন ও পরে ১৫ দিন সময় বেঁধে দওয়া হয়। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও অনেক শিক্ষার্থী জুতা না পরেই স্কুলে আসে। এতে ‘ক্ষিপ্ত হয়ে’ বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক স্বপন মণ্ডল ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করেন। এতে তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ননীক্ষীর ইউনিয়নের জলিরপাড়ের বিভিন্ন মহলে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনিন্দিতা বালা বলছে, “রোববারও অনেকে ক্লাসে জুতা পরে আসেনি। তাই সহকারী প্রধান শিক্ষক স্বপন মণ্ডল স্যার ক্লাসে ঢুকে তাদের বেত দিয়ে পেটান।”
স্কুলের প্রধান শিক্ষক নির্মল সাহা বেত্রঘাতের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস ও জুতা পরে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এক মাসেও অনেকে জুতা পরে স্কুলে আসেনি। আমরা জানতে পারি, তারা জুতা না পরেই স্কুলে আসবে। ফলে ড্রেস ও জুতা পরে স্কুলে আসতে বাধ্য করাতে সহকারী প্রধান শিক্ষক বেত্রাঘাত করেছেন।”
শিক্ষার্থীদের শুধু হাতে ও পায়ে ‘সামান্য’ বেত মারা হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষকের দাবি।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আহত এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, “লেখাপড়ার জন্য শাসন বা মারধর করলে আমার কোনো অভিযোগ ছিল না। জুতা পরে যায়নি, এ অপরাধে তাদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া যেত। অথবা ফোনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলতে পারতেন সহকারী প্রধান শিক্ষক। কিন্তু তিনি যেভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের বেত দিয়ে মারধর করেছেন, এটা ঠিক হয়নি।”
তিনি বলেন, “শুধু আমার ছেলে নয়। দুই তরুণী শিক্ষার্থীকেও মেরে আহত করা হয়েছে। একজন জলিরপাড় মধুমতি হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।”
ননীক্ষীর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান শেখ বলেন, “এ ঘটনায় ননীক্ষীর ইউনিয়নের জলিরপাড় বাজার ও পুরো ইউনিয়নে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক স্বপন মণ্ডলের আগের অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এলাকাবাসী ভাল চোখে দেখছে না। তিনি মানুষ হিসেবেও ভাল নন।
“এর মধ্যে রোববার তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বদ মেজাজী ওই শিক্ষাকে এ ঘটনায় বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সহকারী প্রধান শিক্ষক স্বপন মণ্ডলের মোবাইল ফোন কলা হলে তার মেয়ে ওই স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুপ্তি মণ্ডল কল রিসিভ করে জানায়, তারা বাবা ফোন রেখে বাইরে গেছে। তাদের ক্লাসেও তার বাবা ‘বেত দিয়ে পিটিয়েছে’।
এ বিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহাদাত মোল্লা বলেন, “শিক্ষার্থীদের মারধর করার কোনো বিধান নেই। বিধি ভেঙে যদি কোনো শিক্ষক মারধর করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে।
“তবে বেত্রঘাতের ঘটনায় আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”