রূপপুর প্রকল্পের গাড়ি থেকে চালকের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার

কুষ্টিয়া-পাবনার সীমান্তবর্তী পদ্মানদীর শিলাইদহ ঘাট এলাকায় টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িটি দুদিন ধরে পড়ে ছিল।

পাবনা প্রতিনিধিকুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2023, 09:26 AM
Updated : 25 March 2023, 09:26 AM

নিখোঁজের দুদিন পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের এক গাড়ি চালকের বস্তাবন্দী মরদেহ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

শনিবার সকাল ৮টার দিকে কুষ্টিয়া-পাবনার সীমান্তবর্তী পদ্মানদীর শিলাইদহ ঘাট এলাকায় পরিত্যক্ত সাদা রঙের একটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ির ভেতর থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি মহসিন হোসাইন। 

নিহত সম্রাট খান রূপপুর প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিকিমথ-র গাড়ি চালক। ২৮ বছরের সম্রাট পাবনার ঈশ্বরদী পৌর এলাকার মধ্য অরণকোলার আলহাজ্ব ক্যাম্প মহল্লার আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে। 

এ ঘটনায় ঈশ্বরদী থানা পুলিশ সীমা খাতুন (২২) নামের এক নারীকে আটক করেছে। 

পুলিশ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে নিকিমথ এর পরিচালকের পাজেরো গাড়িটি চালাতেন সম্রাট। বৃহস্পতিবার দুপুরে গাড়ি নিয়ে অফিসে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি। 

অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান না পেয়ে পরিবারের লোকজন বিষয়টি মৌখিকভাবে থানায় জানালে পুলিশ তার খোঁজ শুরু করে। 

পরে মোবাইলের কললিস্টের সূত্র ধরে নিকিমথ এর অপর গাড়ি চালক আব্দুল মমিনের স্ত্রী সীমাকে আটক করে ঈশ্বরদী থানার পুলিশ। 

ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, সম্রাট নিখোঁজের বিষয়টি গত শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে তার বাবা আবু বক্কার ও গাড়িটির মূল মালিক আনিছুর রহমান থানায় এসে মৌখিকভাবে জানান। 

“এরপর বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। সেখানে আমরা দেখতে পাই গত বৃহষ্পতিবার রাত ৯টার পর থেকে নিহত সম্রাটের মুঠোফোন বন্ধ। তার আগে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের মধ্যে নিকিমথ এর অপর গাড়ি চালক ঈশ্বরদী উপজেলার বাশেরবাদা গ্রামের বাহাদুর খানের ছেলে আব্দুল মমিন। 

“পরে মোমিনের স্ত্রী সীমা খাতুনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসি। সীমার নিকট থেকে কিছু চমকপ্রদ ক্লু পাওয়ার পর থেকেই আমরা সেপথে এগিয়ে গিয়ে সম্রাটের মরদেহের সন্ধান পাই।” 

ঘটনার পর থেকেই মমিনের মুঠোফোন বন্ধ ও পতালক রয়েছেন। তাঁকে খুজে পেলে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। 

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালা জানান, সকালে স্থানীয়দের দেওয়া খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি একটি দামী গাড়ি পড়ে আছে। গাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে দুই একজনের সাথে কথা বলতেই ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

কুমারখালী থানার ওসি মহসীন হোসাইন বলেন, এখানে অনেকেই বেড়াতে এসে এভাবে গাড়ি রাখেন বিধায় কেউই গুরুত্ব দেয়নি প্রথমে। 

গাড়িটি রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা ব্যবহার করতেন। লাশটি সুরতহালের জন্য রিপোর্ট করে গাড়িটি জব্দ করেছি। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও ঘাট এলাকার দোকানদার ইউসুফ আলী বলেন, “গত বৃহস্পতিবার থেকে এখানে গাড়িটি পড়ে ছিল। আমরা গুরুত্ব দেই নাই, কেননা এখানে অনেকেই ঘুরতে আসেন। 

“তবে সকালে গাড়ি পাশে গেলেই পচা দুর্গন্ধ বের হওয়ায় আমাদের মধ্যে সন্দেহ হয়, পরে আমরা পুলিশে খবর দেই।” 

এদিকে সম্রাটের চাচা আলমগীর হোসেন বাদশা বলেন, “আমার ভাতিজার দুই বছরের একটি মেয়ে ও স্ত্রী আছে। ” 

তবে সম্রাটের স্ত্রী সাথী খাতুনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। সে কান্না জড়িত কন্ঠে শুধু বিলাপ করছেন- “আমার মেয়েকে কে দেখবে।” 

সম্রাটের ভাই ইমরান হোসেন কান্না জড়িত কন্ঠে ভাই হত্যার বিচার চান। 

এ হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রাথমিকভাবে প্রেমঘটিত বিষয়াদি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও প্রকৃত রহস্য আরো তদন্ত সাপেক্ষে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।