টাঙ্গাইল জেলায় বর্গফুট নয়; পিস হিসেবে চামড়া বেচাকেনা হয়।
Published : 02 Jul 2023, 10:51 PM
টাঙ্গাইল জেলার বৃহত্তর হাট ঘাটাইলের পাকুটিয়ায় বিপুল পরিমাণ চামড়া আমদানি হলেও ক্রেতা নেই। আড়ৎদাররা যে দাম বলছেন তাতে লোকসান হবে বলে বিক্রি করেননি মৌসুমি ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। তারা চামড়া পরের হাটের জন্য রেখে দিয়েছেন।
রোববার দিনভর হাটে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। হাটটি সপ্তাহে দুদিন- রোব ও বুধবার বসে।
সকালে থেকে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী কাঁচা চামড়া নিয়ে হাটে আসেন। কোরবানির পর এটি ছিল প্রথম হাট। আড়ৎদাররা বলছেন, তারা আরও দুটি হাট দেখবেন তারপর কিনবেন।
মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আজগর আলী জানান, তিনি গ্রামাঞ্চল থেকে মাঝারি আকারের ৬০টি গরুর চামড়া প্রতি পিস ৪৫০ টাকা দরে কিনে লবণ দিয়েছেন। রোদ না থাকায় শুকানো যাচ্ছে না। বিক্রি করতে চাইলে পাইকার বা আড়তদাররা প্রতি পিস ৫০০ টাকা দাম করছেন। এতে তার লোকসান হবে।
আরেক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মোস্তফা জামান জানান, তিনি গরুর নাগড়া অর্থাৎ বড় আকারের ১২ পিস চামড়া ৮০০ টাকা দরে কিনে প্রাথমিকভাবে লবণ মাখিয়েছেন। হাটে উঠানোর পর পাইকাররা প্রতি পিস ৯০০ টাকা দাম করছেন। প্রতি পিস ১২০০ টাকার কমে বিক্রি করলেও তার লোকসান হবে।
হাটের আড়তদার আহাম্মদ আলী ও আলী হোসেন জানান, ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ধরা হয়েছে ৪৫-৪৮ টাকা; যা গতবার ছিল ৪০-৪৪ টাকা। তবে গরুর চামড়ার দাম বাড়লেও খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা আর বকরির চামড়া ১২-১৪ টাকায় অপরিবর্তিত নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু টাঙ্গাইল জেলায় বর্গফুট নয়; পিস হিসেবে চামড়া বেচাকেনা হয়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মাঠ পর্যায় থেকে যে মূল্যে চামড়া সংগ্রহ করেছেন তাতে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। তারা ইচ্ছে করলেও সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া দামের বেশি দিয়ে চামড়া কিনতে পারছেন না।
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, টাঙ্গাইলে প্রতিটি গ্রামে একাধিক সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে। পৃথক পৃথক ভাবে কোরবানি দেওয়া হলেও চামড়াগুলো একত্রে সামাজিকভাবে বিক্রি করা হয়। তারা সমাজের কাছ থেকে অনেকটা কম দামে চামড়া সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে কিছুটা মুনাফা নিয়ে বিক্রি করে দেন।
গ্রামাঞ্চলে চামড়াগুলোর দাম কিছুটা কম থাকে। কারণ, গ্রামাঞ্চলে কোরবানি দেওয়া গরুর আকার সাধারণত ছোট হয়। শহরাঞ্চলে বড় গরু কোরবানি দেওয়া হয় বলে দামও কিছুটা বেশি হয়।
পাকুটিয়া চামড়ার হাটের ইজারাদার মো. রাকিব খান জানান, এ বছর প্রায় ৩২ লাখ টাকায় হাটের ইজারা নিয়েছেন। কোরবানির প্রথম হাট হিসেবে চামড়ার আমদানি হলেও বিক্রির সংখ্যা খুবই কম। এসব চামড়ার একটা অংশ হাটের গুদামে লবণ দিয়ে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
হাটে বেশিরভাগ আড়তদার আসেনি। প্রায় হাটেই ঢাকা থেকে কোম্পানি বা ট্যানারির প্রতিনিধিরা আসেন। তারাও আসেননি।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রানা মিয়া জানান, জেলায় এ বছর এক লাখ ৮৫ হাজার ২৬৩টি কোরবানির মধ্যে এক লাখ ১২ হাজার ৫৮১টি ছাগল ও চার হাজার ৪১টি ভেড়া কোরবানি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চামড়ার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখভাল করে থাকে। সঠিকভাবে পশুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য কোরবানি দাতাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারপরও পশুর শরীর থেকে চামড়া ছাড়াতে অনেকের ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকতে পারে।
মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের মতে, এর মধ্যে ছাগলের চামড়া ৬০-৬৫ হাজার বেচাকেনা হয়েছে। অন্যগুলো মাঝারি আকারের গরুর চামড়ার সঙ্গে ফ্রি দিতে হয়েছে অথবা ফেলে দিতে হয়েছে। ভেড়ার চামড়া ২০-২৫টি সংগ্রহ করা গেছে, অন্যগুলো ফেলে দেওয়া হয়েছে।