২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে সুজন মালিথাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে চলে যায় আসামিরা।
Published : 26 Dec 2024, 07:23 PM
কুষ্টিয়ায় পাঁচ বছর আগে এক বিএনপি কর্মীকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’র অভিযোগে করা মামলায় তৎকালীন পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানা এই আদেশ দেন জানিয়েছেন কুষ্টিয়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম।
এস এম তানভীর আরাফাত বর্তমানে সিলেট রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজির দপ্তরে উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুর উপজেলায়।
পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপি কর্মী সুজন মালিথাকে কথিত ‘বন্দুক যুদ্ধে’র মাধ্যমে হত্যার মামলার প্রধান আসামি তানভীর আরাফাত বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন।
তবে শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পাঁচ বছর আগে সুজন মালিথাকে হত্যার ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর এসপি তানভির আরাফাতকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন সুজন হোসেন।
বাদী সুজন মিল লাইনের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ও নিহত সুজন মালিথার ‘রাজনৈতিক বড় ভাই’ ।
এ মামলার এজাহার নামীয় অন্য আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ (কারান্তরীণ), সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, দৌলতপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান টোকন চৌধুরী।
এছাড়া কুষ্টিয়া মডেল থানার সাবেক ওসি নাসির উদ্দিন, সাবেক ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান, সাবেক এসআই সাহেব আলী, এসআই মোস্তাফিজুর রহমানও এই মামলার আসামি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল মালিথার ছেলে সুজন মালিথা (৩২) একজন একনিষ্ঠ বিএনপি কর্মী ছিলেন।
২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে দলীয় কাজ শেষে সুজন মালিথা বাড়ি ফেরার পর আসামিরা তার বাসায় প্রবেশ করে এবং জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে চলে যায়।
পরদিন সকালে সুজনের পরিবার জানতে পারে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরস্পরের যোগসাজশে আসামিরা ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৩০ মিনিটে কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন মোল্লাতেঘরিয়া পূর্ব ক্যানালের পাড়ে সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যা করেছে।
মালিথার পরিবারের লোকজন আসামিদের কাছে উপস্থিত হয়ে তাকে হত্যার কারণ জিজ্ঞাসা করলে কোনো সদুত্তর না দিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া একাধিকবার উক্ত ঘটনার বিষয়ে মামলা করার চেষ্টা করলে আসামিরা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। এমন প্রতিকূল ও প্রতিবন্ধকতার কারণে পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে নিহতের পরিবার থানায় গিয়ে মামলা করতে পারেননি। তবে ঘটনার বিষয়ে এলাকার অনেকেই অবগত আছেন।
এদিকে কুষ্টিয়ায় চাকরি করার সময়ে বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত এসপি তানভির আরাফাতকে কারাগারে পাঠানো সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে স্বয়ং আদালত পাড়াতেই অনেককে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বেঞ্চ সহকারী জানান, এসপি তানভির প্রকাশ্যে জনসমাবেশে ‘বালিস ছাড়া শোওয়াইয়া দিব’ এমন ঘোষণা দিয়েই একাধিক বিচারবহির্ভূত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন জেলাতে।
এমনকি ভেড়ামারায় পৌরনির্বাচনে ভোট কারচুপিতে বাধা দেয়ায় কর্তব্য পালনরত একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে লাঞ্ছিত করার অপরাধে তাকে উচ্চ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। ওই ঘটনায় তিনি বিভাগীয় শাস্তির মুখেও পড়েছিলেন বলে জানা যায়।