রেলের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের শুরুতেই চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় রেল বিভাগ। কিন্তু তারা এর তোয়াক্কা করেননি, বলেন রেলওয়ে কর্মকর্তা।
Published : 18 Nov 2024, 08:44 PM
লালমনিরহাটে রেলের জমিতে গড়া সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ছেলের ব্যক্তিগত পার্কটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সোমবার দিনভর অভিযান চালিয়ে পার্কটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বলে লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় সহকারী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান।
স্থানীয়রা জানান, লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলরুটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পূব পাশে উন্মুক্ত জায়গায় এলাকার লোকজন অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করতেন। পাশে রেল লাইনের ধারে অর্ধশত ভূমিহীন পরিবার বসবাস করছিল।
দুই বছর আগে এসব দোকান ও বসতি উচ্ছেদ করে প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, সাবেক মন্ত্রীর ছেলে জায়গাটি দখলে নিয়ে প্রথমে টিন দিয়ে ঘিরে ফেলেন। পরে চারদিকে তোলা হয় ইটের প্রাচীর। মূল ফটকের উপর বসানো হয় কংক্রিটের নৌকা। শুধু তা-ই নয়, এর পাশেই ব্যক্তিগত অফিস গড়ে তোলেন তিনি।
মন্ত্রীপুত্র রাকিবুজ্জামান তার ব্যক্তিগত পার্কের ভেতরে বসান চেয়ার-টেবিল। সেখানে তিনি মাঝে-মধ্যে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেন। এছাড়া ভেতরের অংশে একটি বড় পুকুর কেটে এর চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয় সড়ক।
রেলওয়ে কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রেলের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের শুরুতেই রাকিবুজ্জামানকে চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় রেল বিভাগ।
“কিন্তু তারা এর তোয়াক্কা করেননি। পরে গত বছর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ওই জায়গায় দুইবার অভিযানে যান। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব উচ্ছেদ অভিযানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।”
নুরুজ্জামান আহমেদ ২০১৪ সাল থেকে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
তিনি ২০১৬ সালে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সালে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তবে ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত মন্ত্রিসভা থেকে তিনি বাদ পড়েন।
এদিকে, বাবার প্রভাবে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পদ পান রাকিবুজ্জামান আহমেদ।
এরপর প্রথম বারের মত নির্বাচনে অংশ নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন।
গত ৫ অগাস্ট তীব্র গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে নুরুজ্জামান আহমেদ ও ছেলে রাকিবুজ্জামানসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য পলাতক আছেন।
এরই মধ্যে সোমবার দিনভর উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে মন্ত্রীপুত্রের ব্যক্তিগত পার্ক ও মন্ত্রীর ভাইয়ের গুদাম ঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
তবে পার্কটির পাশে থাকা বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করা হয়নি।
উচ্ছেদ অভিযানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন, রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী কমান্ড্যান্ট আতাউল গণি ওসমানীসহ রেল পুলিশ কর্মকর্তারা।
রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “কৃষি জমির লাইসেন্স নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করে স্থাপনাগুলো তৈরি করা হয়েছিল।”
“তাদের কয়েক দফায় চিঠি পাঠানো হলেও ক্ষমতার প্রভাবে তারা তোয়াক্কা করেননি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হওয়ায় আমরা মন্ত্রীর ছেলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছি।”
মন্ত্রীর ছেলের ব্যক্তিগত পার্কে উচ্ছেদের খবরে আনন্দ-উল্লাস করেন স্থানীয়রা।