একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভাড়া অর্ধেক করারও দাবি জানিয়ে আসছেন সংগঠনটির নেতারা।
Published : 15 Nov 2024, 08:41 PM
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া কমানো ও শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া বাস্তবায়নের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ শহরে রোববার আধাবেলা হরতাল ডাকা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার ফোরামের ব্যানারে এ হরতাল ডাকা হয়।
শুক্রবার বিকালে শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে সংগঠনটির আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি এই ঘোষণা দেন।
এর আগে ২৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে টানা ৯ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় যাত্রী অধিকার ফোরাম।
বাসভাড়া কমানোর দাবিতে সংগঠনটি ২৯ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচারণা, নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়, মিছিল, সমাবেশ ও মশাল মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
দাবি মানা না হলে ১৭ নভেম্বর অর্ধদিবস হরতালেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা নির্ধারণের দাবি সংগঠনটির।
একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভাড়া অর্ধেক করারও দাবি জানিয়ে আসছেন সংগঠনটির নেতারা।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সামাজিক, নাগরিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বাসভাড়া কমানোর পক্ষে তাদের অবস্থান জানিয়েছেন।
এ দাবিতে তারা ডিসি বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
গত কয়েকদিনে ডিসির নেতৃত্বে যাত্রী অধিকার ফোরাম, বাস মালিক ও সরকারি কয়েকটি দপ্তরের সমন্বয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে।
তবে, বাসভাড়া কমানোর বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ফলে, আগামী রোববার অর্ধদিবস হরতাল কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাত্রী অধিকার ফোরাম।
শুক্রবার সমাবেশে রফিউর রাব্বি বলেন, “এই দাবি হুট করে উত্থাপন করা হয়নি। নারায়ণগঞ্জে বাসভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য বহুবছর আমরা সংগ্রাম করছি। পরিবহনকে কেন্দ্র করে এটিকে চাঁদাবাজির উৎস হিসেবে রেখে লক্ষ-কোটি টাকা সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নেওয়া দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া।”
তিনি বলেন, “বিশেষ করে শেখ হাসিনার শাসনামলে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শেখ হাসিনার আমলে কীভাবে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া অযৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিবহন খাতে সম্পৃক্ত হয়ে সরকারি মন্ত্রী-আমলারা পরিবহন মালিকদের সাথে যোগসাজসে ভাড়া নির্ধারণ করে গেছেন।”
“বিআরটিসির সভাপতি হচ্ছেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক আমাদের নিয়ে কয়েকবার বসেছেন। আমরা বলেছি, কিলোমিটার প্রতি যে ভাড়া সরকারিভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি অযৌক্তিক। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা তাদের দলীয় ক্যাডারদের সুবিধা দেওয়ার জন্যই এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “গত এপ্রিলের ওই প্রজ্ঞাপনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে সাড়ে ১৯ কিলোমিটারে ভাড়া দেখানো হয়েছে ৫৩ টাকা। অথচ ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৫৪ টাকা কিন্তু ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা। এর বিরুদ্ধে বিআরটিএ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই।”
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে দৈনিক ৫০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন দাবি করে রফিউর রাব্বি বলেন, “ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতিদিন লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছে।”
তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, ১৫ তারিখের মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ভাড়া ৪৫ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত করা হয় নাই।”
ডিসিকে উদ্দেশে করে সংগঠনের আহ্বায়ক বলন, “এই গণদাবির প্রতি সম্মান রেখে ৪৫ টাকা ভাড়া ঘোষণা করুন। না হলে আগামী পরশুদিন নারায়ণগঞ্জের মানুষ রাস্তায় নেমে হরতাল পালনের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের দ্বিতীয় দফার কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
“নারায়ণগঞ্জের মানুষ আগেও তাদের ন্যায্য দাবি কীভাবে আদায় করতে হয় তার প্রমাণ দেখিয়েছে, আগামী পরশুদিনও দেখবেন।”
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডিসি মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, “আমরা বাসভাড়া নতুনভাবে নির্ধারণের বিষয়ে মালিক ও যাত্রী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে একাধিকবার বসেছি।”
“উভয়পক্ষই তাদের মতামত দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি। তবে দুই-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।”