রাত পৌনে ১টার দিকে রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়।
Published : 06 Feb 2025, 12:49 PM
রংপুরে বুলডোজার দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রথমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। পরে সেটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। চত্বরটিকে ‘মুক্তমঞ্চ’ নামে ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা।
এ সময় শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন বলেন, “খুনি হাসিনার হাতে হাজারো ছাত্রসমাজের রক্তের দাগ লেগে আছে। খুনি হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অস্তিত্ব বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আর থাকবে না।”
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম মুছে দিয়ে ‘বিজয় ২৪’ নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নামফলকও ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরে তারা ভেঙে ফেলা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের সামনে শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র দাহ করে উল্লাস প্রকাশ করেন।
এদিকে রাত পৌনে ১০টার দিকে নগরীর কলেজ রোড লালবাগ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জড়ো হয়ে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা ফটকের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি হাতুড়ি, কুড়াল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙচুর করে এবং স্লোগান দিতে থাকে।
রাত পৌনে ১টার দিকে রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়।
৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে সেখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভেঙে ক্ষতবিক্ষত করে শহীদ আবু সাঈদের ছবি সম্বলিত একটি ব্যানার সাঁটানো হয়েছিল। স্থানটির নামকরণ করা হয় ‘স্বাধীনতা চত্বর’।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব রাজিমুজ্জামান হৃদয় বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিব ম্যুরালের কবর রচনা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুলডোজার দিয়ে ফ্যাসিবাদী মুজিব চিহ্ন মুছে দেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে কারমাইকেল কলেজের ভাস্কর্য বেদীর একটি ছবি পোস্ট করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার লিখেছেন, “স্বাধীনতার ভাস্কর্য অক্ষুণ্ন রেখে ফ্যাসিবাদের কবর দেওয়া হলো...।”
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ছাত্র-জনতা রংপুর মহানগরীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল থেকে ফ্যাসিবাদের চিহ্ন বিলীনসহ গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, “শেখ হাসিনা লাইভে এসে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার প্রতিবাদে আমাদের বুলডোজার কর্মসূচি। আমার ভাইদের রক্তের দাগ না শুকাতেই খুনি হাসিনা প্রকাশ্যে আসার সাহস দেখায় কী করে? ফ্যাসিবাদকে এ দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করা হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব রহমত আলী বলেন, “হাসিনা দেশব্যাপী যে ফ্যাসিবাদী চিহ্ন রেখে গেছেন, আমরা তা নিশ্চিহ্ন করতে আজ একত্রিত হয়েছি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে, যতক্ষণ না ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।”