ফরিদপুর জেলা কারাগারের চিকিৎসা কেন্দ্রের একমাত্র সহকারী সার্জনের পদটি গত এক যুগ ধরে শূন্য। এখানে কোনো চিকিৎসক নেই, একজন ফার্মাসিস্ট কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। একজন বন্দি অসুস্থ হলে তিনজনের প্রহরায় তাকে বাইরের হাসপাতালে পাঠাতে হয় কর্তৃপক্ষকে; যাতে কারাগারের কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
প্রায় দুইশ বছরের পুরনো এই কারাগারে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুনের বেশি বন্দি রয়েছে। তার উপর আশপাশের জেলা থেকেও অসুস্থ বন্দিরা আসেন। কারাগারের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার সুযোগ না থাকায় তাদেরও বাইরে পাঠাতে হয়।
কারাগার সূত্র জানায়, তিন মাসে বিভিন্ন রোগ নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন এক হাজার ৫০ বন্দি। বর্তমানে দুইজন বন্দি ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ ছাড়া এক মাসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে এক বন্দি।
ফরিদপুর জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ-আল—মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রাচীন এই বন্দিশালায় ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৪২০ জনের। বর্তমানে ৮৯৭ জন পুরুষ ১৭ নারী বন্দি অবস্থান করছেন। যদিও প্রতিদিন বন্দি কম-বেশি হয়।
১৮২৫ সালের ৩৪ একর জায়গা নিয়ে শহরের মূল সড়কের (মুজিব সড়ক) ঝিলটুলী এলাকাতে প্রতিষ্ঠিত হয় জেলা কারাগার। কারাগারের নয় একর জায়গায় বন্দিদের থাকার ভবন। বাকি ২৫ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে পুকুর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার ভবন ও কার্যালয়।
কারাগারের ভিতরে একটি টিনসেডের কক্ষ রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে। যদিও তা ব্যবহারের অনুপযোগী। সেখানে রোগীদের ভর্তি রেখে চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, “এখানে একটি পদ রয়েছে সহকারী সার্জনের; সেটি এক যুগের বেশি শূন্য। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে একজন চিকিৎসককে প্রেষণে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি মাঝে মধ্যে আসেন। এর বাইরে একজন সিনিয়র ফার্মাসিস্ট রয়েছেন।
“যে জনবল রয়েছে তাতে বন্দি একজনকে বাইরের হাসপাতালে পাঠানো হলে তার পেছনে তিনজন পুলিশ সদস্যকে পাহারার জন্য দিতে হয়। এতে অন্য কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।”
ফরিদপুর জেলা কারাগারের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার দায়িত্বে থাকা ফার্মাসিস্ট আশরাফুল আলম বলেন, “এখানের কারাগারে বন্দিদের জন্য দুই থেকে তিনজন সার্বক্ষণিক চিকিৎসক এবং তিন থেকে চারজন সেবিকা দরকার। এ ছাড়া অসুস্থ বন্দিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য পৃথক একটি হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখার দরকার।”
ফরিদপুর জেলা কারাগারের বেসরকারি কারা পরিদর্শক কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, বলেন, “কারাগারের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুনের বেশি বন্দি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বন্দিদের নানাবিধ সমস্যা হয় এটা সত্য। তবে আমার পরামর্শ হলো, কারাগারের বন্দিদের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চিকিৎসা সেবাসমূহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিতে হবে।”
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে একজন চিকিৎসকে কারাগারের সংযুক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত কারাগার পরিদর্শন করা হয়। বন্দিদের সুবিধা-অসুবিধা খোঁজ নেওয়া হয়। বড় কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”