পরীক্ষা স্থগিত করে যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে তাকে তদন্ত চলাকালীন বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
Published : 13 Mar 2025, 12:40 AM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সেমিস্টার ফাইনালের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার ওই কোর্সের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
পাশাপাশি অপরিচিত ইমেইল থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, সেই শিক্ষককে তদন্ত চলাকালীন বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর তথ্য দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ হায়দার আলী।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, একটি পরীক্ষা বাকি থাকার আগের দিন বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলামকে জড়িয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ করা হয় ইমেইলে।
এরপর সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার ফাইনালের বৃহস্পতিবারের ‘মোবাইল জার্নালিজম’ শীর্ষক ওই কোর্সের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে এ ঘটনা তদন্তে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক জাকির ছায়াদউল্লাহ খানকে আহ্বায়ক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নুরুল করিম চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-প্রকৌশল অনুষদের ডিন মো. সাইফুর রহমান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন ও সহকারী প্রক্টর নাহিদা বেগম।
তৃতীয় বর্ষের সেমিস্টার ফাইনালের চারটি পরীক্ষার মধ্যে ওই একটি কোর্সের পরীক্ষা বাকি রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে একটি অপরিচিত মেইল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে একটি মেইল করা হয়। এতে অভিযোগ করা হয়, সাংবাদিকতা বিভাগের ১৫ ব্যাচের সেমিস্টার পরীক্ষার প্রতিটি কোর্সের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। বিভাগের শিক্ষক কাজী আনিছ এক নারী শিক্ষার্থীকে এগুলো দিয়েছেন।
মেইলে আগের তিন পরীক্ষার এবং পরের পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তরসহ কিছু পিডিএফ সংযোজন করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি পিডিএফের মেটাডাটা তুলে ধরা হয়। মেটাডেটা বিশ্লেষণে ওই শিক্ষকের সরবরাহ করা পিডিএফ ফাইল তৈরির ডিভাইস, তারিখ তুলে ধরা হয় মেইলে।
অভিযোগের বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক কাজী আনিছ সাংবাদিকদের বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। কর্তৃপক্ষ আমার কাছ থেকে যদি কোনো স্টেটমেন্ট চায় তাহলে আমি তা দেব।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান পরীক্ষা স্থগিতের তথ্য দিয়ে বলেন, “বিষয়টি যেহেতু বেনামি মেইল থেকে আসা তাই আমরা সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না, যদি শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ না দেয়।”
ওই পরীক্ষা কমিটির সভাপতি প্রভাষক জাকিয়া জাহান মুক্তা বলেন, “প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব। অভিযোগটি ভিত্তিহীন না কি সত্য, তা তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
কমিটির সদস্যরা আলোচনা করে ওই ব্যাচের শেষ পরীক্ষা আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তুলে ধরেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরী বলেন, “প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে এ সংক্রান্ত একটি মেইল পেয়েছি। আমরা ওই বিভাগের চেয়ারম্যানসহ কথা বলেছি। আগে বিভাগের একাডেমিক কমিটি বিষয়টি দেখবে। তারপর এই বিষয়ে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”