পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় ১৫২টি ইট ভাটার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন আছে ৮৯টির; ৬৩টি চলছে অনুমোদন ছাড়া।
Published : 14 Apr 2023, 09:07 PM
লক্ষ্মীপুর সদরে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠের বুকে গড়ে উঠেছে ইটভাটা; সেখানে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন।
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলার পূর্ব দিঘলী এলাকায় ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ‘মেসার্স ভাই ভাই ব্রিকস’। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে ভাটাটি পরিচালনা করছেন সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মুজিব।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ভাটাটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। অনুমোদনহীন এই ভাটার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বছরের পর বছর ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ছে ক্ষেতের ফসল। হচ্ছে পরিবেশ দূষণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেবল সদর উপজেলার ভাই ভাই ব্রিকসই নয়; জেলার অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে ফসলি জমি, জনবসতিপূর্ণ আবাসিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায়।
তবে এর মধ্যে কয়েকটি ভাটাকে জরিমানা করা এবং কয়েকটিকে গুড়িয়ে দেওয়া হলেও বন্ধ হয়নি কার্যক্রম।
সরেজমিনে মেসার্স ভাই ভাই ব্রিকসে দেখা গেছে, পরিবেশবান্ধব চিমনির পরিবর্তে ‘ড্রাম চিমনি’ ব্যবহার করা হয়েছে। চারিদিকে স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঠ। ইট পোড়াতে এসব কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাটায় শিশু শ্রমিককেও কাজ করতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া ট্রাক্টর দিয়ে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন জমির উর্বরা শক্তি কমে যাচ্ছে, তেমটি ট্রক্টর চলার কারণে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তাগুলো চলাচল অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। এতে সড়কে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নিয়ম থাকলেও ১২০ ফুট উচ্চতার পাকা চিমনি দেখা যায়নি।
ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি জমিতে কোনো ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। ভাটায় থাকতে হবে ন্যূনতম ১২০ ফুট উচ্চতার পাকা চিমনি। এছাড়া, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে হবে কয়লা। কোনোভাবেই কাঠ কিংবা টায়ার পোড়ানো যাবে না।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক কৃষক জানান, ইটভাটার মালিকরা সরকারদলীয় প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করেন না। আবার, প্রকাশ্যেই পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করলেও তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনসহ পরিবেশ অধিদপ্তরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
কৃষি বিভাগ বলছে, ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে জমিতে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কৃষকদেরও কৃষি কাজে অনীহা চলে এসেছে। এ জন্য প্রতিবছরই কমছে ফসলি জমি।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন বলেন, “ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে ফুসফুসের প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশিসহ মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সব থেকে বেশি ভুগতে হয় শিশুদের।”
মেসার্স ভাই ভাই ব্রিকসের মালিক শেখ মুজিব বলেন, “অনুমোদনহীন ও সনাতন পদ্ধতিতে ইটভাটা পরিচালনা করা অপরাধ। ভবিষ্যতে এভাবে আর ভাটা পরিচালনা করব না।
“রাজনৈতিক বা সাবেক জনপ্রতিনিধির প্রভাব খাটিয়ে নয়, বিভিন্ন সংকট ও সমস্যার কারণে অনুমোদন ছাড়াই ইটভাটা পরিচালনা করছি।”
লক্ষ্মীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ পাঠান বলেন, “জনবল সংকট থাকার পরও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটায় প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাচ্ছে।
“তবে আইন ভঙ্গকারী ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। শীঘ্রই সদর উপজেলার ভাই ভাই ব্রিকসসহ অনুমোদনহীন সব ইট ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে কোনোভাবেই পরিবেশ দূষণ ও কৃষি জমি ধ্বংসকারী চিমনি ভাটা চলতে দেওয়া হবে না।