নেত্রকোণায় হাওরের প্রধান নদী ধনুর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে খালিয়জুরী উপজেলার বিভিন্ন বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও কৃষক সম্মিলিতভাবে বাঁধে কাজ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ কীর্তনখোলা বাঁধ। হাওরের এই বাঁধটি ভেঙে গেলে উপজেলার অন্তত পাঁচটি ইউনিয়নের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ ধনুর পানি খালিয়াজুরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে বলে জেলা পাউবোর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত জানান।
কীর্তনখোলা বাঁধে সোমবার নতুন করে চারটি ফাটল দেখা দিলে তা তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করা হয় বলে জানান তিনি।
এ অবস্থায় হাওরজুড়ে জোরকদমে ফসল কাটায় মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ আবাদের ৬৮ শতাংশ ক্ষেতের ধান কৃষক ঘরে তুলেছেন বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এফ এম মোবারক আলী জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এবার এ জেলায় সরকারি ৩৯৪টি হারভেস্টার যন্ত্র দিয়ে ধান কাটার কাজ চলছে। জেলার বাইরে থেকে আসা শ্রমিকেরাও ধান কাটছেন। তাছাড়া অনেক কৃষক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভাড়ায় হারভেস্টার মেশিন এনে ধান কাটছেন। এবার কৃষকরা একরপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ মণ ধান পাচ্ছেন।
এবার উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ধান। তার মধ্যে উফশীতে হেক্টরপ্রতি গড়ে ধরা হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ১৫ মেট্রিক টন, হাইব্রিড ৭ দশমিক ৩৭ মেট্রিক টন আর স্থানীয় জাত ধরা হয়েছে তিন মেট্রিক টন।
কৃষি কর্মকর্তা মোবারক আলী জানান, জমিতে আগাম জাতের ব্রি-২৮ কাটা শেষ হয়েছে। জমিতে রয়ে গেছে ব্রি-২৯ ও হাইব্রিড। এই ধান পাকতে শুরু করেছে। আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে হাওরের ধান কাটা শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরে হাওরে পানি বাড়লে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
প্রথম দফা উজানের ঢলে নেত্রকোণার হাওরের প্রধান নদী ধনুর পানি বেড়ে খালিয়াজুরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে ৬৫০ জন কৃষকরে ১০৭ হেক্টর জমির বোরো ফসল নষ্ট হয় বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য।
তিনি বলেন,“ বাঁধে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। নির্দেশনা দেওয়া আছে কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা সমাধান করার।”
সম্প্রতি ভারতের মেঘালয়ে অতিবৃষ্টির ফলে পানির চাপ বেড়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন হাওরে। কোথাও কোথাও ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ভরাডুবি হয়েছে অনেক কৃষকের। তাই ৮০ শতাংশের বেশি ধান পেকে গেলেই তারা শুরু করছেন ফসল ঘরে তোলার কাজ।
একই উপজেলার গছিখাই গ্রামের আব্দুল আহাদ বলেন, “কীর্তনখোলা বানডাই আমরার জীবন। এই বানডা ভাঙলে পাঁচটা ইউনিয়নের সব হাওরে পানি ঢুইক্যা পড়ব। অহনও হাইব্রিড আর ব্রি-২৯ জাতের ধানডা রইয়া গেছে ক্ষেতে। ঠিকমতো পাকে নাই। কয়েকটা দিন লাগব। এই সময়ডা লাগাত বানডা ঠিহানি লাগবো। তাইলেই মনে করুইন, আমরার বেবাক ধান ঘরে লইয়া আইয়া ফালাম।”
আরও পড়ুন: