শনিবার সকালে মেঘালয় থেকে আসা ঢলে টাঙ্গুয়ার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। আরও কয়েকটি বাঁধে ফাটল ধরার খবর পাওয়া গেছে। এসব বাঁধ শক্ত করতে স্থানীয়ভাবে কৃষকরা কাজ করছেন।
তবে এখন পর্যন্ত যেসব ফসল তলিয়েছে, তার অধিকাংশই ফসল রক্ষা বাঁধের বাইরের। আর ঢলের চাপ টাঙ্গুয়ার হাওরমুখী হওয়ায় পাশের শনি ও মাটিয়ান হাওরের বাঁধে কিছুটা কম চাপ পড়বে বলে অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন কৃষকরা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম রোববার দুপুরে বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তসংলগ্ন ভারতীয় অংশের চেরাপুঞ্জিতে ৩৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে সুরমা, যাদুকাটা, বৌলাই, ধুনসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়ছে।
“রোববার, সোমবার ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। তাই নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যেসব পয়েন্টে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেসব পয়েন্টে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।”
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, জেলায় চলতি বছর দুই লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এখন প্রতিটি হাওরের জমি সবুজ। কেবল ধানে শীষ আসতে শুরু করেছে।
“আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন পর হাওরের ধান পাকা শুরু হবে। হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধে যে চাপ পড়েছে এটি দুর্যোগের প্রাথমিক আভাস।”
তিনি আরও বলেন, “তাহেরপুরের নজরখালি বাঁধ ভেঙে ২৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। আর এ বছর সংরক্ষিত হাওরে প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকা রামসার অন্তর্ভুক্ত থাকায় এখানে পাউবো ও কৃষি বিভাগ কোনো কাজ করে না। স্থানীয় গ্রামবাসী উঁচু অংশে কিছু চাষ করেন। এই হাওরে নীতিমালা অনুযায়ী কিছু করার সুযোগ নেই।“
হাওরের বিভিন্ন ফসল রক্ষা বাঁধে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বাঁধের কাজ প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়নি বলে বিভিন্ন সময়ে কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগও করা হয়।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবীর বলেন, “টাঙ্গুয়ার হাওর সংরক্ষিত। এখানে কৃষকরা চাষবাস করেন না। যার ফলে পাউবো কখনও এখানে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করে না। এই হাওরের উঁচু অংশের কিছু খাসজমিতে স্থানীয় কৃষকরা চাষ করেন। চলতি বছর তাহিরপুর অংশে ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, তারা নিজেদের ফসল রক্ষার কথা চিন্তা করে বাঁশ-চাটাই দিয়ে আড় বেঁধে বাঁধটিকে এক সপ্তাহ আগে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করেছেন। বাঁধটি নিচু হওয়ায় পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কাতেই বাঁধ উপচে ও ভেঙে শনিবার হাওরের ফসল ডুবে গেছে।
বাঁধ এলাকা গোলাবাড়ির বাসিন্দা ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাজিনুর মিয়া বলেন, “বাঁধটি অনেক নিচু ছিল। আমরা গ্রামবাসী বাঁশ-চাটাই দিয়ে বেড়া দিয়েছিলাম। বাঁধটি উঁচু হলে এবং শুরু থেকেই বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়া হলে প্রাথমিক ধাক্কা সামলানো যেত।
তিনি আরও বলেন, পাশের উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের গুরমার হাওরে প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫টি প্রকল্প দিয়ে কোটি কোটি টাকার অপচয় করা হয়। কিন্তু এখানে দুটি প্রকল্প দিলে গুরমার হাওরসহ টাঙ্গুয়ায় স্থানীয়রা যে কিছু জমি চাষ করেন তা সুরক্ষিত থাকত। আমরা বারবার কর্তৃপক্ষকে আবেদন করেও বুঝাতে পারছি না।
টাঙ্গুয়ার হাওরের ধর্মপাশা উপজেলার দক্ষিণ ও উত্তর বংশিকুণ্ডায় প্রায় পাঁচ হাজার একর জমির বোরো ধান চাষ হয়েছে বলে জানান বংশিকুণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ।
তিনি আরও বলেন, “নজরখালি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে এখন এই ফসল তলিয়ে গেছে।”