হাওরে ডুবেছে ‘বোরো’, কৃষকের কপালে ভাঁজ

নেত্রকোণায় হাওরাঞ্চলের কয়েকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে ফসল রক্ষা বাঁধের আওতার বাইরে কিছু নিম্নাঞ্চলের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় এখন বোরো ধান নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

লাভলু পাল চৌধুরী নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2022, 03:33 AM
Updated : 4 April 2022, 03:42 AM

শনিবার থেকে হাওরের বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি বাড়লেও তা এখনও বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে এবং ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফ এম মোবারক আলী রোববার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বছর জেলার হাওরাঞ্চলে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এই আবাদের সঙ্গে অন্তত এক লাখ ৮০ হাজার কৃষক জড়িত। হাওরে এক ফসলি জমি হওয়ায় সেখানকার কৃষকদের এই বোরো ফসলের ওপরই নির্ভর করতে হয়। ৩০ মার্চ থেকে উজানের ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধের আওতায় নয় এমন হাওরের নিম্নাঞ্চলের ১১৩ হেক্টর বোরো ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে।

খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের কীর্তনখোলা হাওর, চুনাই হাওর, বাদিয়ারচর হাওর, টাকটারের হাওর, মনিজান হাওর, লেবরিয়া হাওর, হেমনগর হাওর, চাকুয়া ইউনিয়নের গঙ্গবদও হাওর, নয়াখাল হাওর, গাজীপুর ইউনিয়নের বাগানী হাওর ও ডাকাতখালি হাওরের নিচু ও ফসল রক্ষা বাঁধের বাইরে আবাদ করা জমির ফসল বর্তমানে ছিল দুধ ও দানা পর্যায়ে। সেগুলোই ডুবেছে।

এফ এম মোবারক আলী বলেন, “মূলত এসব জমিতে লাগানো ফসলকে আমরা ‘চান্স ক্রপ’ বলি। এখানে যে ফসল লাগানো হয় সেগুলোতে সুযোগ মিললে ফসল হবে। আর পানি চলে এলে কৃষক এই ফসল কেটে গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন।“

দেশের খাদ্যশস্যের একটি বড় জোগান আসে হাওর থেকে। বিশাল হাওর বিস্তৃত সাত জেলা নিয়ে। এ জমির পুরোটাই এক ফসলি। হাওরের বোরো ধান রক্ষায় রয়েছে ফসল রক্ষা বাঁধ। এ বাঁধ তলিয়ে গেলে মানুষের দুর্দশার সীমা-পরিসীমা থাকে না। তাই বাঁধ নিয়ে শঙ্কা বোরো ফসল না তোলা পর্যন্ত কাটে না কৃষকের।

এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষতি না হলেও সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে গেছে। সোমবারও বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বেশ কয়েকটি হাওরের বাঁধে ফাটল ধরার খবরে আগাম বন্যার শঙ্কায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে লাখ লাখ কৃষকের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, “এখনও বাঁধ থেকে গড়ে প্রায় তিন ফুট নীচে পানি অবস্থান করছে। আর আট থেকে নয় দিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। বড় ধরনের দুর্যোগ না হলে শঙ্কার কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, “দ্রুততার সঙ্গে যাতে কৃষক হাওরের ধান কেটে ঘরে তুলতে পারেন সেজন্যে জেলায় ৩৯০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গতবছর ২৮৫টি দেওয়া আছে। আর এ বছর ১০৫টি বরাদ্দ এসেছে। এগুলো দ্রুতই বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।”

হাওরের নেত্রকোণা জেলার অংশে মোট ৩৬৫ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ রয়েছে উল্লেখ করে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, “এ বছর ১৮৩ কিলোমিটার বাঁধের সংস্কারকাজ সময়মতো সম্পন্ন হওয়ায় বাঁধ ভাল অবস্থায় রয়েছে। হাওরের প্রধান নদী ধনু বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি বইছে।

রোববার বিকালে তিনি বলেন, “গত ১২ ঘণ্টা ধরে নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমান আবহাওয়া ও ঢলের পানি নিয়ে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই।”

খালিয়াজুরী উপজেলার আদমপুর গ্রামের কৃষক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, “আমার নিচু এলাকায় রোপণ করা এক একরের মতো জমির ফসল ঢলে তলায়া গেছে। ধান তো আর পাইতাম না। এখন এই ধান গাছ গরুর জন্যে কাইট্যা আনতাছি। তবে পানি যেভাবে বাড়তাছে তাতে আমরা দুঃশ্চিন্তায় পড়ছি। এইবায় বাড়লে এক সপ্তাহে ফসল রক্ষা বান্দেও ফিরাইতে পারবো বইল্যা মনে হয় না।“

একই উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের ধনেশ বর্মণ জানান, তার প্রায় দেড় একরের মতো জমির ধান ঢলে ডুবে গেছে। এগুলো আর টিকবে না।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নদীর তীরবর্তী ও হাওরের নিচু এলাকায় এই আবাদ করি। আমার মতো অনেকেই করে। এই জমিগুলো ফসল রক্ষা বাঁধের আওতার বাইরে।

“ধনুর পানি কিন্তু বাড়তাছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টিও হইতাছে। সব মিলায়া যদি পানি বাড়া না থামে তাইলে কিন্তু আমরার ধান নিরাপদে ঘরে তোলা নিয়া দুঃশ্চিন্তা আছে।”