হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে অনিয়মের অভিযোগ

হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে যথাসময়ে কাজ না করা, কাজের নিম্নমানের কারণে পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কাতেই তাতে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2022, 01:49 PM
Updated : 3 April 2022, 01:49 PM

রোববার সুনামগঞ্জ জেলা শহরের ট্রাফিক মোড়ে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ এর নেতারা এই অভিযোগ করেন।

দেশের খাদ্যশস্যের একটি বড় জোগান আসে হাওর থেকে। বিশাল হাওর বিস্তৃত সাত জেলা নিয়ে। এ জমির পুরোটাই এক ফসলি। হাওরের বোরো ধান রক্ষায় রয়েছে ফসল রক্ষা বাঁধ। এ বাঁধ তলিয়ে গেলে মানুষের দুর্দশার সীমা-পরসীমা থাকে না। তাই বাঁধ নিয়ে শঙ্কা বোরো ফসল না তোলা পর্যন্ত কাটে না কৃষকের।

কৃষকরা জানিয়েছেন, ধান এখনও দুধ বা দানা পর্যায়ে। ফসল গোলায় তুলতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। শনিবার থেকে হাওরের নদ-নদীতে পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষতি না হলেও সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে গেছে। বেশ কয়েকটি হাওরে ফাটল ধরার খবরে আগাম বন্যার শঙ্কায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে লাখ লাখ কৃষকের।

এর মধ্যে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা এই অভিযোগ করেন। সংগঠনটির কর্মীরা সারা জেলাজুড়েই অবস্থান করছে।

তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও কিছু এলাকা সরজমিন পরিদর্শন করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেনরায় বলেন, “যথাসময়ে বাঁধের কাজ সম্পন্ন না হওয়া, প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করা, বাঁধে দুর্বাঘাস না লাগানোসহ নানা কারণে বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে পাহাড়ি ঢলের ঝুঁকির মুখে আছে এসব বাঁধগুলো।

“আমরা সরজমিন দেখে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। মার্চ মাসে দুই দফা সময় বাড়িয়ে গত সপ্তাহে বাঁধের কাজ শেষ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করা গেলে বাঁধ টেকসই হতো এবং পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কা সামলাতে পারত।”

হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাসহ নানা ইস্যু নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত দেওয়া হয়েছে বলেও জানান বিজন সেনরায়।

তিনি দাবি করেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের পোল্ডার-১ এর আওতাধীন মইয়ার হাওরের ১৬ ও ১৭ নম্বর ফসল রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে ফাটল দেখা দিয়েছে। এই দুটি প্রকল্পে ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এক সপ্তাহ আগে এই দুটি বাঁধে বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধেও ফাটল দেখা দিয়েছে।“

বিজন সেনরায় আরও বলেন, তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের গুরমার হাওরের ১৭ নম্বর প্রকল্পের বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফাটল দেখা দিয়েছে। উত্তর বড়দল ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি ও সমসার হাওরের বাঁধেও ফাটল দেখা দিয়েছিল এক সপ্তাহ আগেই। শনিবার নজরখালি বাঁধ ভেঙে টাঙ্গুয়ার হাওরের ছয় হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে।