লঞ্চে আগুন: বিয়ের বাজার নিয়ে নিখোঁজ বাবা-মা-ভাই

বড় মেয়ের জন্য বিয়ের বাজার করে বাড়ি ফিরছিলেন বাবা-মা; সঙ্গে পরিবারের আরেক সদস্য, আড়াই বছরের নাসিরউল্লা; তিনজনই ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন ঝালকাঠিতে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার পর।

ঝালকাঠি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2021, 01:36 PM
Updated : 25 Dec 2021, 05:42 PM

তাদের আত্মীয় নজরুল ইসলাম স্বজনদের খোঁজ না পেয়ে শনিবার সকালে আসেন পোড়া লঞ্চে। লঞ্চের একটি কেবিনে তিনি তার বোন, ভগ্নিপতি ও আড়াই বছর বয়সী ভাগনের জিনিসপত্র শনাক্ত করেন।

নজরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার ভগ্নিপতি হাকিম শরিফ (৫০) ঢাকায় ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। হাকিমের বড় মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ের জন্য ঢাকা থেকে কেনাকাটা করে বরগুনার বাড়ির পথে রওনা হন হাকিম। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ও ছোট ছেলে নাসিরউল্লা।

“বৃহস্পিবার রাত ৮টার দিকে ভগ্নিপতির সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনে কথা হয়। ভগ্নিপতি বলল, ‘ডেকে যাব ভাবছিলাম, কিন্তু সঙ্গে টাকা থাকায় কেবিনেই রওনা করি।’ তারপর তাদের আর খোঁজ মেলেনি। আজ এই লঞ্চের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজার পর সামনের কেবিনে তাদের পোশাক দেখে চিনতে পারি। এই কেবিনেই আমার বোন, ভগ্নিপতি আর ভাগনের মৃত্যু হয়েছে।”

তারা মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করলেও নজরুল তাদের লাশ পাননি বলে জানান।

ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠিতে সুগন্ধা নদীতে শুক্রবার ভোরের দিকে লঞ্চটিতে আগুন লাগে। এতে তিন ডজনের বেশি মানুষের প্রাণ যায়। নিখোঁজ হন অনেকে। তাছাড়া দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছেন অর্ধশতাধিক।

নিহত বা দগ্ধদের মধ্যে নজরুল তার স্বজনদের খুঁজে পাননি বলে জানান।

আগুন নেভানোর পর শুক্রবার দিনভর তল্লাশি চালিয়ে পোড়া লঞ্চ আর নদী থেকে ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। তাছাড়া ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় দগ্ধ এক শিশুর। আর ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ের।

তাছাড়া আরও নয়জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে পরিবার। অন্যদের ঠাঁই হয়েছে গণকবরে।

কিভাবে লঞ্চে এই নজিরবিহীন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল তা এখনও সুস্পষ্ট না। ইঞ্জিন থেকে আগুন লাগে বলে আইন-শঙ্খলা বাহিনী প্রাথমিক ধারণার কথা বলছে। কিন্তু নিচলায় ছড়ানোর আগেই দোতালায়ও আগুন দেখা দেওয়ায় তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। তাছাড়া বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলেও বক্তব্য এসেছে মালিকপক্ষ থেকে।

আগুন লাগার সময় শীতের রাতে অধিকাংশ যাত্রী ঘুমাচ্ছিলেন। দুই তলার বন্ধ কেবিনে যারা ঘুমাচ্ছিলেন, তাদের অনেকের বের হওয়ারও সুযোগ হয়নি। সেই আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা।

আরও পড়ুন: