দগ্ধদের মধ্যে কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার দূরে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠাতে হয়েছে।
বাকি রোগীদের শের-ই বাংলা মেডিকেলের সার্জারি বিভাগে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ঢাকা থেকে পাঁচ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল বরিশালে যাচ্ছেন দগ্ধদের চিকিৎসা দিতে।
শুক্রবার গভীর রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুল হতাহতের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ রোগীদের বেশিরভাগকে বরিশালে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহতদের মধ্যে ৮০ জনকে এ হাসপাতালে আনা হয় জানিয়ে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এখানে বার্ন ইউনিট বন্ধ। যারা এসেছেন তাদের অনেকেই দগ্ধ হয়েছেন। ৭০ জনকে সার্জারি ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।”
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগটি বন্ধ রয়েছে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে। গত বছরের ২৮ এপ্রিল এই বিভাগের প্রধান চিকিৎসক এমএ আজাদ সজল মারা যান এক দুর্ঘটনায়। এরপর থেকে সেখানে পোড়া রোগীদের চিকিৎসাও বন্ধ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ বন্ধের একমাত্র কারণ চিকিৎসক সঙ্কট। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. শাখাওয়াত হোসেনকে এই বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু তিনি যোগ দেননি। তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ।
পরিচালক বলেন, ওই বিভাগটি বন্ধ থাকায় বেডগুলো মহামারীর মধ্যে জরুরিভিত্তিতে কোভিড ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। অন্যান্য জনবল বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করছে।
এখন বিভাগটি পুনরায় চালু করার আশা জেগেছে জানিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, “ঝালকাঠিতে দুর্ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের দেখতে শুক্রবার দুপুরে শের-ই বাংলা মেডিকেলে এসেছিলেন স্বাস্থ্য সচিব। বিভাগটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। শিগগিরই চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”
গত বছর সেপ্টেম্বরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেঠিলেন, “আগুনে পোড়া রোগীদের শতভাগ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে সব ধরনের ব্যবস্থা থাকলেও প্রধান অস্ত্র চিকিৎসক নেই।”
এ হাসপাতাল ৫০০ থেকে এক হাজার বেডে উন্নীত করা হয়েছে অনেক আগে। তবে সব জায়গায় প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
“এর মধ্যে সামাল দিতে হচ্ছে ১৫০ বেডের করোনাভাইরাস ইউনিট। অথচ আমাদের ২২৪টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ১২৬টিই শূন্য। চিকিৎসক সঙ্কটের মধ্যে জোড়াতালি দিয়েই চালাতে হচ্ছে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা।”
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সেবা আবার কবে নাগাদ চালু হতে পারে জানতে চাইলে বাকির বলেছিলেন, “সার্জারি বিভাগের অধীনে এটি চালু করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। চিকিৎসক সঙ্কট সমাধানের জন্য জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন আমি শুধু প্রস্তাব পাঠাতে পারি, বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের।”