নারায়ণগঞ্জে ১৪ বছর পর গ্রামে ফিরে আসা এক তরুণকে ধরে এলাকাবাসী পুলিশে দিয়েছে, যাকে অপহরণের অভিযোগে সে সময় মামলা করেছিল পরিবার।
Published : 21 May 2021, 03:06 PM
সদর উপজেলার কুঁড়েরপার এলাকার ২২ বছর বয়সী এই তরুণ এখন বলছেন, ‘গরুর ঘাস কাটার কষ্ট সইতে না পেরে’ শৈশবে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন তিনি।
রুবেল নামের ওই তরুণ কুঁড়েরপার এলাকার জানু মিয়ার ছেলে। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি বাড়ি ফিরে এলে এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দেয়। স্থানীয়রা তাকে আটক করে। পরে পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।
সদর থানার ওসি শাহ জামান বলেন, শিশু রুবেলকে অপহরণের অভিযোগে তার মা রাহিমা বেগম ২০০৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের আদালতে একটি মামলা করেন। স্থানীয় ১৯ জনকে সেখানে আসামি করা হয়।
মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন সদর থানার এসআই মোখলেসুর রহমান। তিনি আসামিদের দোষা না পেয়ে পরের বছর ৩০ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন।
কিন্তু বাদী পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে নারাজি দিলে মামলার তদন্তভার পায় সিআইডি। কয়েক মাস পর সিআইডিও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। বাদী তাতেও নারাজি দেন।
ওসি বলেন, পরে র্যাব এ মামলার দায়িত্ব পেয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তবে র্যাবের সেই তদন্ত শেষ হয়নি। আদালতের আদেশে তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আসাদুজ্জামান ফরাজী তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। ওই দিন আসামিদের দোষ না পেয়ে মামলাটি নিষ্পতি করে দেয় আদালত।
এত বছর পর রুবেল বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরে এলে তাকে দেখতে ভিড় জামায় আশপাশের মানুষ। খবর পেয়ে ছুটে যান রুবেলের মায়ের করা সেই মামলার আসামিরাও। তারা রুবেলকে নিয়ে থানায় যান।
রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার মা দুইটা গরু পালত। গরুর জন্য ঘাস না কাটলে মা মারত। আবার ঘরে গিয়ে খাওন পাইতাম না। মার অত্যাচারে সাত-আট বছর বয়সে ঘর থেইকা বাইর হইয়া গেছিলাম।”
এত বছর ঢাকার মগবাজার ও হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন বলে জানালেন রুবেল।
“রঙের কাজ করতাম। খাবারের দোকানে কাজ করছি। ইস্টার্ন প্লাজায় কাজ করছি। পরে ওইখানেই একটা মেয়েরে বিয়া করছি।”
রুবেল বলেন, “গত বছর আমাগো এক আত্মীয়র সাথে দেখা হইছে। তার মাধ্যমে মার সাথে কথা হয়। মারে কইলাম বাড়ি আসি। তখন মায় কইলো বাড়িতে আসলে গ্রামের মানুষ তরে মাইরা ফেলব। আমি তাগো নামে মামলা করছি। তাই ভয়ে আসি নাই।
“আজ কাউরে কিছু নাই কইয়া গ্রামে আসছি। কিন্তু গ্রামের মানুষ আমারে চিনতে পারছে। তারা আমারে দেখার পর তাকায় ছিল। মার সাথেও দেখা হইছে। পরে সেখান থ্যাইকা আমারে থানায় নিয়ে আসছে গ্রামের মানুষ।”