ফেনীতে ১০ দিনে ধর্ষণের ৯ মামলা

ফেনীতে চলতি বছর ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মোট ৫৫টি মামলা হয়েছে থানায়, যার মধ্যে ৯টি মামলা হয়েছে অক্টোবরের প্রথম ১০ দিনে।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2020, 08:13 AM
Updated : 12 Oct 2020, 08:13 AM

চলতি মাসে দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতাসহ মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দাকর নুরুন্নবী বলেন, “পুলিশ বিভিন্ন সময়ে এসব মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে ভিকটিমদের অধিকাংশের ২২ ধারায় জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে আদালতে।”

ছাগলনাইয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, গত ৫ অক্টোবর মহামায়া ইউয়িনের উত্তর যশপুর গ্রামে ৪ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তার আপন চাচা ইমন বাদশার বিরুদ্ধে মামলা করেন শিশুটির মা।

ওই মামলায় ৯ অক্টোবর যশপুর গ্রামের উত্তর পাড়ার রবিউল হকের ছেলে ইমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এর আগে একই ইউনিয়নে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফজলুল করিম বাবুর বিরুদ্ধে। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল করিম চৌধুরী ওরফে সবুজসহ অন্যরা সালিশ বসিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

পরে গত ৬ অক্টোবর ওই কিশোরী বাদী হয়ে ছাগলনাইয়া থানায় মামলা করে। কিশোরীকে ধর্ষণ এবং তাতে সহায়তার অভিযোগে সেই রাতেই এক ইউপি সদস্যসহ পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বলে জানান ওসি।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মূল আসামি ফজলুল করিম বাবু, তার সহযোগী রেজিয়া বেগম, রাবেয়া আক্তার মুক্তা, আবুল হোসেন এবং নুরুল করিম চৌধুরী ওরফে সবুজ।

তাদের মধ্যে আবুল হোসেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ইউপি সদস্য সবুজ ছাগলনাইয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে জানান ওসি মাহবুবুর।

একই উপজেলায় দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দারুল কোরআন একাডেমির হাফেজ আবু নাছেরকে (২৬) আসামি করে গত ৫ অক্টোবর ছাগলনাইয়া থানায় এক অভিভাবক মামলা করেন বলে পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান জানান।

মামলায় বলা হয়, ওই শিক্ষক গত জুলাই মাসের ৭ এবং ২৯ তারিখে ওই দুই শিশুর ওপর যৌন নিপীড়ন চালান। পরে ওই মামলায় হাফেজ আবু নাছেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

নাছের নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার রসুলপুর ইউপির দক্ষিণ লতিফপুর রমিজ উদ্দিন হাজী বাড়ির মো. ওবায়দুল হকের ছেলে।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, ১ অক্টোবর সকালে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামে সপ্তম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে তার জেঠা তমিজ উদ্দিন নয়ন (৪৫) তার দোকানে নিয়ে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

ওই ঘটনায় ৮ অক্টোবর রাতে মেয়েটির মা বাদী হয়ে নয়নকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় ৮ অক্টোবর মধ্যরাতে মতিগঞ্জ ভাদাদিয়া গ্রামের চুনি মাঝি বাড়ি থেকে নয়নকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ওই এলাকার ছৈয়দ আহাম্মদের ছেলে নয়ন মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

‘অনৈতিক কাজে’ জড়িত থাকায় এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে নয়নকে ইতোমধ্যে দলের সকল স্তরের সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে মতিগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসমাইল জানিয়েছেন।

ফুলগাজী থানার ওসি কুতুব উদ্দিন জানান, মুন্সিরহাট ইউনিয়নের কামাল্লা গ্রামের এক বিধবা (৪৮) নারীকে গত ৬ অক্টোবর ভোরে তার প্রতিবেশী মন্টু মিয়া (২৬) ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ ওঠে।

পরে ওই নারী বাদী হয়ে মন্টু মিয়াকে আসামি করে ফুলগাজী থানায় মামলা করেন। ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় কামাল্লা গ্রাম থেকে মন্টু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মন্টু উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের কামাল্লা গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে।

দাগনভূঞা থানার ওসি মো. আসলাম শিকদার বলেন, উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ

সালাম ১ অক্টোবর রাতে তার প্রতিবেশী এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ আসে।

ওই নারী গত ৫ অক্টোবর ফরিদকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।

তাকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবদীন মামুন।

একই উপজেলায় পূর্ব চন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়নের বৈঠার পাড় গ্রামে চতুর্থ শ্রেণির এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে (১০) ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে তার চাচা কবির আহাম্মদ (৩৮) ও সালিশদার কামাল উদ্দিনকে (৪৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শিশুটির মায়ের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, গত ৪ অক্টোবর বাড়ির বাইরে খেলতে গেলে ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে পাশের একটি খালের পাড়ে নিয়ে ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ চালান ভ্যানচালক কবির আহাম্মদ।

স্থানীয় সালিশদার কামাল হোসেন সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করবেন বলে কবিরের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

ফেনী মডেল থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান,  শহরের একাডেমি বনানীপাড়া এলাকায় বস্তিতে ৩ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ২ অক্টোবর প্রতিবেশী রাজমিস্ত্রী শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেন মেয়েটির মা।

সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের কোনো একদিন বনানী পাড়া এলাকার পুরাতন রেললাইন সংলগ্ন ডুবাই ট্রাস্টের বস্তিতে ওই শিশুটিকে শহীদুল ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে ৯ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমরান হোসেন সাংবাদিকদের জানান।  ঘটনার পর থেকে শহীদুল পলাতক রয়েছেন।

ওসি আলমগীর বলেন, একই উপজেলায় কে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আব্দুল্লাহ আল রেজবী জাবেদকে কক্সবাজারের একটি হোটেল থেকে ৩ অক্টোবর রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জাবেদ সদর উপজেলার ছনুয়া গ্রামের মুন্সি পুকুর এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে।

মামলায় বলা হয়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ছাগলনাইয়ার দূর্গাপুর গ্রামের বাড়ি থেকে মায়ের সঙ্গে ওই স্কুল ছাত্রী শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথে দুই যুবক ফেনী শহরতলীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে তাদের গাড়ির আটকে মেয়েটিকে নামিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

পরে মেয়েটির ভাই ফেনী মডেল থানায় জাবেদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। ১৪ দিন পর কক্সবাজার থেকে উদ্ধার হয় ওই স্কুল ছাত্রীকে।

৪ অক্টোবর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে মেয়েটি অভিযোগ করে, তাকে হোটেলে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে জাবেদ।