বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ যাত্রা শুরুর পাঁচ বছরের মাথায় বন্ধ হয়ে গেছে চিকিৎসক সঙ্কটে।
Published : 18 Sep 2020, 11:09 AM
গত ২৮ এপ্রিল বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডে একটি বেসরকারি হাসপাতালের লিফটের নিচ থেকে বরিশাল মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক এমএ আজাদ সজলের লাশ উদ্ধার হয়।
তিনিই ছিলেন বরিশাল মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের একমাত্র চিকিৎসক। তার মৃত্যুর পর মে মাস থেকে এ বিভাগের চিকিৎসা সেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে সেবা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। আগুনে পোড়া রোগীদের বাধ্য হয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে ঢাকায়।
“চালু হওয়ার পর থেকে বন্ধ হওয়া পর্যন্ত কয়েক হাজার আগুনে পোড়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এখানে। বরিশাল বিভাগে আগুনে পোড়া রোগীদের একমাত্র ভরসা ছিল এই বার্ন ইউনিট।”
এখন হাসপাতালের ‘সার্জারি ওয়ার্ডে’ আগুনে পোড়া রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাদের অধিকাংশকেই ঢাকায় পাঠাতে হয় বলে জানান চাঁদনী।
এ বিভাগের ব্রাদার লিঙ্কন দত্ত বলেন, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসক সঙ্কট শুরু থেকেই। তবে অন্যান্য জনবল প্রয়োজন অনুযায়ী রয়েছে।
চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রাখতে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. শাখাওয়াত হোসেনকে এই বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে ৬ মাস ধরে তিনিও ছুটিতে আছেন।
লিঙ্কন বলেন, “এমএ আজাদ সজলই মূলত এ বিভাগে চিকিৎসা দিতেন; তিনিই একমাত্র ডাক্তার ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর বার্ন ইউনিটের সেবাও বন্ধ হয়ে যায়।”
তিনি বলেন, রান্না করতে গিয়ে গ্যাসের চুলার আগুনে দগ্ধ হয়েছেন তার স্ত্রী। বরিশাল মেডিকেলের চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠাতে বলেছেন। এখন তিনি ঢাকা যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করছেন।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেনও বললেন অসহায়ত্বের কথা।
“আগুনে পোড়া রোগীদের শতভাগ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে সব ধরনের ব্যবস্থা থাকলেও প্রধান অস্ত্র চিকিৎসক নেই।”
এ হাসপাতাল ৫০০ থেকে এক হাজার বেডে উন্নীত করা হয়েছে অনেক আগে। তবে সব জায়গায় প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি এখনও।
“এর মধ্যে সামাল দিতে হচ্ছে ১৫০ বেডের করোনাভাইরাস ইউনিট। অথচ আমাদের ২২৪টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ১২৬টিই শূন্য। চিকিৎসক সঙ্কটের মধ্যে জোড়াতালি দিয়েই চালাতে হচ্ছে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা।”
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সেবা আবার কবে নাগাদ চালু হতে পারে জানতে চাইলে বাকির বলেন, “সার্জারি বিভাগের অধীনে এটি চালু করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। চিকিৎসক সঙ্কট সমাধানের জন্য জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন আমি শুধু প্রস্তাব পাঠাতে পারি, বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের।”