ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছে পরিবার।
Published : 06 Apr 2020, 11:52 AM
সোমবার নুসরাত হত্যার এক বছর পূর্তিতে তারা এই দাবি জানান।
গত বছরের ৬ এপ্রিল কয়েকজন সহপাঠী তাকে পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। চার দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ৯ এপ্রিল রাতে তার মৃত্যু হয়।
আলোচিত এই মামলার গত বছরের ২৪ অক্টোবর ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। এছাড়া প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করে আদালত।
মামলাটি বর্তমানে আপিল নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতে রয়েছে।
নুসরাতের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, আপিল শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি হাসান ইমাম ও সৌমেন্দ্র সরকারের বেঞ্চে শুনানি হবে। করোনাভাইরাসের কারণে আদালত বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলাটির শুনারি হবে।
২০১৯ সালের ২৭ মার্চ নুসরাতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা তাকে যৌন নিপীড়ন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ওই মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের অনুসারী ওই মাদ্রাসার শিক্ষর্থীরা রাফি ও তার পরিবারের সদস্যদের চাপ দিতে থাকে। মামলা তুলে না নেওয়ায় তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
যৌন নিপীড়নের মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী শাহজাহান।
নিরাপত্তার জন্য নুসরাতের বাড়িতে এখনও তিনজন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক পাহারায় রয়েছেন।
হত্যামামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নূর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
এছাড়া নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের ঘটনার তদন্তে গাফিলতি ও নুসরাতের বক্তব্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সোনাগাজী থানার ততকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামরা হয়। ওই মামলায় চাকরিচুত্য ওসিকে ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত।