নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলার আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তার বাবা।
Published : 06 Mar 2020, 03:35 PM
ত্বকীর বাবা নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা রফিউর রাব্বি বলেন, “ত্বকী হত্যার আসামিদের বিচার করতে হলে সরকারের নির্দেশনা লাগবে।
“সরকারের নির্দেশনা ছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না। আমি ত্বকী হত্যার বিচারের নির্দেশ দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাই।”
নারায়ণগঞ্জ শহরের এবিসি স্কুলের ‘এ’ লেভেল শিক্ষার্থী ত্বকী হত্যার সাত বছর পূর্ণ হয় ৬ মার্চ। মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা র্যাব এখনও আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
ত্বকী ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জের শায়েস্তা খান সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। দুদিন পর চারার গোপ এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা কুমুদিনী খালে তার লাশ মেলে।
ত্বকী হত্যার বিচার দাবিতে সারাদেশে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। বিচার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য গঠিত হয় ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ’।
হত্যাকাণ্ডের পর ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন।
আলোচিত এ ঘটনার তদন্তে থাকা র্যাব হত্যার কয়েক মাস পর তৎকালীন সংসদ সদস্য এ কে এম নাসিম ওসমানের (বর্তমানে প্রয়াত) ছেলে আজমেরীর কার্যালয়ে একটি রক্তমাখা প্যান্ট পাওয়ার কথাও জানিয়েছিল।
তবে ওসমান পরিবার বরাবরই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছে, নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ঘনিষ্ঠ রাব্বি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আজমেরীকে জড়াতে চাইছেন।
রাব্বির অভিযোগ, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী আইভীর পক্ষে কাজ করা, পরিবহন খাতে ওসমান পরিবারের চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম গঠন করে আন্দোলন গড়ে তোলায় ক্ষুব্ধ হয়ে তার ছেলেকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
লাশ পাওয়ার ১০ দিন পর শামীম ওসমান ও তার ছেলে অয়ন ওসমানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জেলার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন রাব্বি। শামীম ওসমান বরাবরই ত্বকী হত্যাকাণ্ডে তার পরিবারের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছেন।
সাত বছরেও বিচার শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনসহ নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক-সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক জেলা কমিটির সদস্যসচিব ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, “ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া বিচারহীনতার সংস্কৃতির একটি উদাহরণ। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর জোর দাবি জানাচ্ছি। মুজিব জন্মশত বর্ষেই ত্বকী হত্যার বিচার পাব বলে আমরা আশা করছি।”
অদৃশ্য শক্তি রাষ্ট্রের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে এ হত্যা মামলার বিচার বাধাগ্রস্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান।
তিনি বলেন, “ত্বকী হত্যা নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার একটি। রাষ্ট্রের কোনো একটি অংশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় হত্যার রহস্য উদঘাটিত হলেও অভিযোগপত্র দাখিলা করা হচ্ছে না।”
ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে আসছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে আসছি। ত্বকী হত্যার বিচার হোক। খুনের সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। কিন্তু এখনও হয়নি।”
ত্বকী হত্যার পরের বছর মার্চ মাসে র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ত্বকী হত্যাকাণ্ডে আজমেরী ওসমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেকোনো দিন অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
তদন্তের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে র্যাব ১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন বলেন, “তদন্ত চলছে। বেশ কয়েকজন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন। মামলার তদন্তে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করব।
বর্তমানে মামলাটি র্যাব ১১-এর সহকারী পুলিশ সুপার মশিউর রহমান তদন্ত করছেন বলে তিনি জানান।
শুক্রবার সকালে ত্বকীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মিলাদ মাহফিল এবং বিকালে শেখ রাসেল পার্কে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শিশু সমাবেশ, আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের অয়োজন করা হয়।