ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ৫ জনের মৃত্যু

দেশের পাঁচ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিগাজীপুর, রংপুর ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2019, 08:23 AM
Updated : 27 August 2019, 05:54 PM

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। ভোর ৫টার দিকে গোপালগঞ্জে জেনারেল হাসপাতালে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। সকাল ১০টার দিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫৫ বছর বয়সী এক নারী, প্রায় একই সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক কিশোর, আর সোমবার মধ্যরাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক তরুণের এই মৃত্যু হয়।

ডেথ রিভিউ প্রক্রিয়া শেষে এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১৮৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

যশোর

যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রেবেকা বেগমের মৃত্যু হয়।

রেবেকা যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজবাড়িয়া গ্রামের সেকেন্দার আলীর স্ত্রী।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ওবায়দুল কাদের উজ্জ্বল বলেন, সোমবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তার মৃত্যু হয়।

ডা. ওবায়দুল জানান, হাসপাতালে ভর্তির সময় রেবেকা বেগমের রক্তের প্লাটিলেট ছিল ৪৪ হাজার ৩৬৭। মঙ্গলবার অবস্থার অবনতি হয়ে প্লাটিলেট দাঁড়ায় ১৮ হাজারে। এছাড়া তার এনএস-১, আইজিজি ও আইজিএম সব রিপোর্টই পজিটিভ ছিল। সোমবার দুপুরেই তাকে ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

হাসপাতালে রেবেকা বেগমের স্বজনরা জানান, চারদিন জ্বরে আক্রান্তের পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

গোপালগঞ্জ

মঙ্গলবার ভোরে গোপালগঞ্জে জেনারেল হাসপাতালে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অসিত মল্লিক জানিয়েছেন।

মৃত মাহামুদা আক্তার (৩৫) পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলাদুয়ানিয়া গ্রামের আমির হোসেনের স্ত্রী।

অসিত মল্লিক বলেন, “এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৩৪ জন এসেছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। এখনও ভর্তি আছেন ২২ জন। ২১১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।” 

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রিনা মধু জানান, সেমাবার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে মাহামুদা হাসপাতালের ফিমেল মেডিসিন ওয়াডের ৪ নম্বর বেডে ভর্তি হন। মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত মল্লিক বলেন, “নার্স স্বর্ণা সাহা ও মালতি বিশ্বাস ওই ওয়ার্ডে নাইট ডিউটি করেন। তারা ওই রোগী মৃত্যুর খবর হাসাপাতাল অফিসে জানাননি। তাই এটি আমরাও সন্ধ্যার পরে জেনেছি।”

ওই ওয়ার্ডে কর্মরত নার্স ও সুপাভাইজারদের কাজে অবহেলার অভিযোগে শোকজ করা হবে বলে তিনি জানান।

গাজীপুর

সিটি করপোরেশনের সামন্তপুর এলাকার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এক স্কুলছাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাহজাহান মিয়া জানান, মঙ্গলবার ১০টার দিকে জিসান নামে এই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়। সে স্থানীয় ছোট দেওরা অগ্রণী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটে জিসানের মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গু বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, গত ২৩ অগাস্ট জিসান জ্বর নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার রক্তের প্লাটিলেট কমতে থাকায় তাকে ঢাকায় নিতে বলা হয়। ২৫ অগাস্ট তার রক্তে প্লাটিলেট ছিল ৮৯ হাজার। ২৬ অগাস্ট এ সংখ্যা দাড়িয়েছিল ৬৩ হাজাজে।

“এতে ধারণা করা হচ্ছে জিসান ডেঙ্গু ও নিয়োমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। তবে ডেঙ্গু ছাড়াও অন্য ভাইরাসের আক্রমণেও রক্তের প্লাটিলেট কমে যেতে পারে।”

জিসানের বাবা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রায় ১৮দিন ধরে ডেঙ্গুতে ভুগছিল জিসান। সম্প্রতি তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে সোমবার সন্ধ্যায় সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে জিসান মারা গেছে।

ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসক হুসাইন শাফায়াত জানান, মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টায় তাদের হাসপাতালে সুফিয়া বেগম (৫৫) নামে এই নারী মারা যান।

সুফিয়া উপজেলার বানুড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী।

সোমবার সকালে জ্বর ও মাথা ব্যথা নিয়ে তিনি ওই হাসপাতালে ভর্তি হন।

চিকিৎসক হুসাইন বলেন, “পরীক্ষায় সুফিয়ার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তার রক্তের প্লাটিলেট ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার। পিসিভি ৩৬ এবং এনএস-১ পজেটিভ।

“তাকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে বাথরুমে গিয়ে তিনি হঠাৎ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাকে পরিবারের লোকজন হাসপাতালের বেডে শুয়ে দিলে সেখানেই  তিনি মারা যান।”

রংপুর

ডেঙ্গু নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।  

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইদুজ্জামান রিবেল জানান, সোমবার রাত ২টার দিকে মাহতাব (২৪) নামে ওই যুবকের মৃত্যু হয়।

সাইদুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু রোগ নিয়ে গত ১৮ অগাস্ট রংপুর হাসপাতালে ভর্তি হন মাহতাব।এর আগে তিনি দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

মাহতাবের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় হাসপাতালে ভর্তির একদিন পর তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে সোমবার সকালে তাকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি বলেন, সারাদিন ভালো থাকলেও রাত ১টায় হঠাৎ করে তার খিঁচুনি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি।

ডেথ রিভিউ প্রক্রিয়া শেষে এ বছর ডেঙ্গুতে মোট ৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১৮০ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে।