একরাম হত্যার পাঁচ বছর: দণ্ডিত ১৭ জনের হদিস নেই

পাঁচ বছর আগে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডে নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার পর একবছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও দণ্ডিত ১৭ আসামির কোনো হদিসই বের করতে পারেনি পুলিশ।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2019, 06:20 AM
Updated : 20 May 2019, 06:51 AM

অন্যদিকে দীর্ঘ ১৪ মাসে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিতদের আপিলের শুনানির কোনো উদ্যোগ না থাকায় ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন নিহতের স্বজনরা।

নিহতের ভাই মোজাম্মেল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার ভাই হত্যার বিচারে দোষীদের উপযুক্ত সাজা ঘোষণা করা হলেও ঘটনার হোতা পর্দার আড়ালেই রয়ে গেছে। তবে উচ্চ আদালত থেকে ফাঁসির আসামিরা যেন কোনোভাবে রেহাই না পায় সেদিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। একইসঙ্গে রায় দ্রুত কার্যকর করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

২০১৪ সালের আজকের এই দিনেই (২০ মে) ফেনী শহরের বিলাসী সিনেমা হলের সামনে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি একরামকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই জসিম উদ্দিনের করা হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনীর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনুল হক ৩৯ আসামিকে ফাঁসির আদেশ দেন। সেসঙ্গে মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারসহ ১৬ জন বেকসুর খালাস দেন।

রায় ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালত থেকে ডেথ রেফারেন্সের নথি হাই কোর্টে পাঠানো হয়। ডেথ রেফারেন্স নথির ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত হলেই হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল শুনানি হবে। তবে এবিষয়ে উচ্চ আদালতে কোনো অগ্রগতি নেই।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ২২ জন রয়েছেন কারাগারে; আটজন জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক এবং নয়জন শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিরা হলেন- ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন জিহাদ, সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারির মামাতো ভাই আবিদুল ইসলাম আবিদ, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন অনিক, আরমান হোসেন কাউসার, জাহেদুল হাসেম সৈকত, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, জসিম উদ্দিন নয়ন, এমরান হোসেন রাসেল ওরফে ইঞ্জি. রাসেল, রাহাত মো. এরফান ওরফে আজাদ, একরাম হোসেন ওরফে আকরাম, শফিকুর রহমান ওরফে ময়না, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, মোসলে উদ্দিন আসিফ, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, মহিউদ্দিন আনিছ, বাবলু ও টিটু।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায়ে বলা হয়, স্থানীয় নির্বাচন থেকে আসামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণেই একরামকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত জিহাদ ও আবিদ প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে আইনশৃঙ্খলার গোচরেই পালিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।

তবে আসামিদের অবস্থানের বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন ফেনী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আযাদ।

একরাম হত্যা মামলায় দণ্ডিতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলে, “অন্যান্য হত্যা মামলার মতো এক্ষেত্রেও পলাতক ১৭ দণ্ডিত আসামির অনুসন্ধানে রয়েছে পুলিশ। তাদের হদিস পেলেই গ্রেপ্তার করা হবে। তবে শুনেছি বেশ কয়েকজন আসামি বিদেশে আছে।”

এই হত্যা দণ্ডিতদের মধ্যে কারাবন্দি ২২ জন হলেন- হত্যার পরিকল্পনাকারী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী ওরফে সিফাত, আবু বক্কার সিদ্দিক ওরফে বক্কর, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।

কারাবন্দি দণ্ডিত আসামীদের আইনজীবী আহসান কবীর বেঙ্গল বলেন, নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার কয়েক দিন পর উচ্চ আদালতে আপিল করে কারাগারে থাকা ২২ জন আসামি।